ইঁদুরের ডিজিটাল মস্তিষ্ক

ইঁদুরের ডিজিটাল মস্তিষ্ক

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৬ নভেম্বর, ২০২৫

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সুপারকম্পিউটার ফুগাকুর কম্পিউটিং শক্তি ব্যবহার করে নির্মিত হয়েছে ইঁদুরের একটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল কর্টেক্স। এটি বাস্তব মস্তিষ্কের গঠন, স্নায়ুসংযোগ এবং বৈদ্যুতিক আচরণকে অবিশ্বাস্য সূক্ষ্মতায় প্রতিফলিত করে।

এই ভার্চুয়াল মস্তিষ্কে রয়েছে ১০ মিলিয়ন নিউরন, ২৬ বিলিয়ন সাইন্যাপ্স, এবং ৮৬টি পরস্পর সংযুক্ত অঞ্চল। এটি এখন পর্যন্ত নির্মিত সর্ববৃহৎ এবং জীববিজ্ঞানসম্মতভাবে সবচেয়ে নির্ভুল প্রাণী-মস্তিষ্কের ভার্চুয়াল প্রতিরূপ।

এত বিশদ ও বাস্তবসম্মত প্রাণী-মস্তিষ্কের ডিজিটাল রূপ আগে কখনও তৈরি হয়নি। জাপানের রাইকেন ও ফুজিৎসুর উদ্ভাবিত ফুগাকুর কম্পিউটেশন শক্তি অসীম। এই অসীম শক্তিই কোটি কোটি স্নায়ুকোষের জটিল যোগাযোগকে ডিজিটাল পর্দায় জীবন্ত করে তুলেছে। এটি প্রতি সেকেন্ডে ৪০০ কোয়াড্রিলিয়নেরও বেশি গণনা করতে সক্ষম—যা মানুষের ক্ষেত্রে গণনা করতে হলে মহাবিশ্বের বয়সের সমান সময় লাগত। গবেষকদের মতে, এত বড় স্কেলে এত উচ্চ-নির্ভুলতার সিমুলেশন সম্ভব হওয়াটাই এক বৈপ্লবিক মাইলফলক।

 

এই উচ্চাভিলাষী প্রকল্পটির নেতৃত্ব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালেন ইনস্টিটিউট। এদের বিশদ কোষের ধরন ও বৈজ্ঞানিক তথ্যভাণ্ডার এবং স্নায়বিক সংযোগকারী অ্যাটলাস থেকে সংগৃহীত তথ্য ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে মস্তিষ্কের গঠনগত মানচিত্র। জাপানের ইউনিভার্সিটি অব ইলেক্ট্রো-কমিউনিকেশনস এবং আরও তিনটি প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা যুক্ত হন এই ডিজিটাল মস্তিষ্ককে প্রাণ দেওয়ার কাজে। অ্যালেন ইনস্টিটিউটের ব্রেইন মডেলিং সরঞ্জাম কাঁচা তথ্যকে মডেলে রূপান্তরিত করেছে। আর নিউলাইট নামক সিমুলেটর সেগুলোকে নিউরনের মতো সংকেত বিনিময়কে ও বৈদ্যুতিক তরঙ্গের বিস্তারকে বাস্তবের মতো করে পুনর্গঠন করেছে।

গবেষকদের ভাষায়, একটি ইঁদুরের ডিজিটাল কর্টেক্সকে এত সূক্ষ্মভাবে জীবন্ত করে তোলা শুধু প্রযুক্তিগত বিজয় নয়, এটি ভবিষ্যতের আরও বৃহৎ স্বপ্নের ভিত্তি। এখন তাঁরা আলঝাইমার, মৃগী, স্মৃতিগঠন, বা সচেতনতার মতো জটিল প্রক্রিয়াসমূহকে ভার্চুয়াল পরিবেশে পরীক্ষা করতে পারবেন, ঝুঁকিপূর্ণ বা সীমাবদ্ধ বাস্তব পরীক্ষার আশ্রয় না নিয়েই। রোগ কীভাবে ছড়ায়, কোন পর্যায়ে স্নায়ুতরঙ্গের ব্যাঘাত শুরু হয়, চিকিৎসা কতটা কার্যকর হতে পারে—সবই জানা যাবে নিরাপদ সিমুলেশনে। বাস্তব টিস্যু ব্যবহার না করেই রোগের অগ্রগতি বা সম্ভাব্য চিকিৎসা-পদ্ধতির প্রভাব পরীক্ষা করার ক্ষমতা গবেষণাকে এক নতুন মাত্রা দিচ্ছে।

অ্যালেন ইনস্টিটিউটের গবেষকদের মতে, এবার যেহেতু ইঁদুরের পূর্ণ মস্তিষ্ক বিস্তারিতভাবে মডেল করা সম্ভব হল, পরবর্তী লক্ষ্য হবে অন্য প্রাণী, এমনকি মানুষের পূর্ণাঙ্গ স্নায়ুগঠন ডিজিটালভাবে পুনর্নির্মাণ করা। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস কম্পিউটিং শক্তি যথেষ্ট হলে বাস্তব মস্তিষ্ককে ডিজিটালভাবে নির্মাণকে আর কল্পবিজ্ঞানের গল্প মনে হবে না।

 

সূত্র: Scientists Built a Digital Mouse Brain and It’s Wildly Realistic By Allen Institute, 17th November,2025.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 − 12 =