ইউরোপায় জল ও জীবন ?

ইউরোপায় জল ও জীবন ?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১০ আগষ্ট, ২০২৫

ইউরোপা হল সৌরজগতের ষষ্ঠ বৃহত্তম উপগ্রহ। এটি বৃহস্পতি গ্রহের একটি প্রাকৃতিক উপগ্রহ। গ্যালিলিও গ্যালিলি ১৬১০ সালে এটি আবিষ্কার করেন। ইউরোপা বরফে ঢাকা। বিজ্ঞানীরা মনে করেন এর নীচে একটি বিশাল লবণাক্ত জলের মহাসাগর থাকতে পারে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা ইউরোপার বরফঢাকা পৃষ্ঠে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড কীভাবে গঠিত হয়, সে বিষয়ে দীর্ঘদিনের রহস্যের সমাধানের কাছাকাছি পৌঁছেছেন।
পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, সৌরবিকিরন বা বৃহস্পতির চৌম্বকক্ষেত্র থেকে আসা কণা জলের অণু ভেঙে ফেলে তৈরি করে উচ্চ-প্রতিক্রিয়াশীল হাইড্রক্সিল মূলক, আর সেগুলো একত্রিত হয়ে তৈরি হয় হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড।
প্রথমে নাসার গ্যালিলিও মহাকাশযানের অবলোহিত ম্যাপিং স্পেকট্রোমিটার ইউরোপার পৃষ্ঠে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড শনাক্ত করে। পরে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ এই উপাদানের অস্বাভাবিক মাত্রা দেখতে পায়, বিশেষ করে ইউরোপার অপেক্ষাকৃত উষ্ণ পৃষ্ঠতলে। যা গবেষকদের বিস্মিত করে। কারণ ল্যাবরেটরিতে দেখা গেছে, ঠান্ডা বরফে সাধারণত বেশি হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড থাকে, অপেক্ষাকৃত উষ্ণ অঞ্চলে কম থাকে। কিন্তু কি আশ্চর্য, এক্ষেত্রে ঘটেছে ঠিক উল্টোটা।
জ্যোতির্বিজ্ঞানে বিশৃঙ্খল ভূখণ্ড হল গ্রহের পৃষ্ঠভূমি। সেখানে শৈলশিরা , ফাটল এবং সমভূমির বৈশিষ্ট্যগুলি একে অপরের সাথে এলোমেলোভাবে মিশে থাকে বলে মনে হয়। ইউরোপার এই অঞ্চলগুলিতে উচ্চমাত্রায় কার্বন ডাই-অক্সাইডের অস্তিত্ব লক্ষ্য করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের ধারণা, ইউরোপার উপপৃষ্ঠে বরফের ফাটল দিয়ে কার্বন ডাই-অক্সাইড বেরিয়ে এসে বরফের রাসায়নিক গঠনে পরিবর্তন আনছে। এ ধারণার উপর ভিত্তি করে তাঁরা জল এবং কার্বন ডাই-অক্সাইডের মিশ্র বরফ একটি বায়ুরুদ্ধ স্থানে রেখে তাতে শক্তিশালী ইলেকট্রন বিকিরণ প্রয়োগ করে পরীক্ষা করেন।
ফলাফল থেকে জানা যায়, কার্বন ডাই-অক্সাইড -এর উপস্থিতি হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড উৎপাদনকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ায়। কারণ, কার্বন ডাই-অক্সাইড আণবিক ময়লা সাফাইকারী (মলিকিউলার স্ক্যাভেঞ্জার) হিসেবে কাজ করে। বিকিরণ দ্বারা তৈরি হওয়া ইলেকট্রনগুলোকে তারা ধরে রাখে, ফলে সেগুলো হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ভেঙে ফেলার সুযোগ পায় না। অর্থাৎ কার্বন ডাই-অক্সাইড কার্যত হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডকে সুরক্ষা দেয়।

গবেষকরা বলতে চাইছেন হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড যদি বরফের ফাটল দিয়ে মহাসাগরে পৌঁছায়, তাহলে এটি সেখানে অক্সিজেনের উৎস হতে পারে। যেটা কিনা জীবনের ইঙ্গিত হতে পারে। আবার, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড একটি অক্সিডেন্ট, অর্থাৎ এটি অন্য পদার্থের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া ঘটিয়ে শক্তি ছাড়ে। কিছু জীব এই ধরনের রাসায়নিক শক্তি ব্যবহার করে বেঁচে থাকে (যেমন গভীর সমুদ্রের জীবাণু)। তাই ইউরোপায় হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড-এর অস্তিত্ব সম্ভবত সেখানে আদিম বা এককোষী জীবনের সম্ভাবনা নির্দেশ করে।

নাসার ইউরোপা ক্লিপার এবং ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার জুপিটার আইসি মুন্সএক্সপ্লোরার মিশন এই ধরনের আবিষ্কারের আরও গভীর তদন্তে সহায়তা করবে।
আশা রাখা যায়, এই গবেষণা ইউরোপার বাসযোগ্যতা ও সম্ভাব্য প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করবে।

তথ্যসূত্রঃ Planetary Science Journal ; (23.7.2025).

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × three =