অনন্ত জীবনের গোপন রহস্য নিয়ে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে মহাসাগরে ভেসে বেড়াচ্ছে ‘ইমমর্টাল জেলিফিশ'(Turritopsis dohrnii) আর এই কারণেই এমন নামকরণ করা হয়েছে। তাত্ত্বিকভাবে চিরকাল বেঁচে থাকতে পারে জেলিফিশ। প্রায় সাড়ে ৬ কোটি বছর আগে ডাইনোসরদের মৃত্যুর আগে থেকেই এই ছোট্টো, স্বচ্ছ জেলিফিশ জলে ভেসে বেড়াচ্ছে। যখন একটি ‘ইমমর্টাল জেলিফিশ’-এর বয়স হয়ে যায় বা শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তখন মৃত্যু এড়াতে প্রজাতিটি আবার তার পলিপ পর্যায়ে ফিরে আসে। সে তার শুঁড়গুলোকে পুনরায় শরীরের ভিতরে গুটিয়ে নেয় এবং সমুদ্রের তলায় কোনো শক্ত জায়গায় আশ্রয় নেয়। এই পর্যায় থেকে সে ধীরে ধীরে কুঁড়ি থেকে নতুন প্রাপ্তবয়স্ক আকার তৈরি করতে পারে। জিনগত দিক দিয়ে এরা পলিপের সদৃশ। এই ধরনের জীবনচক্রের জন্য ইমমর্টাল জেলিফিশকে অনেকসময় ‘বেঞ্জামিন বাটন’ জেলি বলেও ডাকা হয়। নামটা এসেছে এফ স্কট ফিটজেরাল্ডের কাল্পনিক চরিত্র অনুসারে যে বৃদ্ধ হয়ে জন্মায় এবং ধীরে ধীরে তার বয়স কমে যায় ও সে অল্প বয়সে মারা যায়। ইমমর্টাল জেলিফিশ
বিজ্ঞানীরা ১৮৮৩ সালে প্রাণীটি প্রথম আবিষ্কার করেন, কিন্তু প্রায় এক শতাব্দী পরে ঘটনাক্রমে এটিকে বন্দী অবস্থায় রেখে এর চিরন্তন জীবন চক্র বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন। তারপরের বছরগুলিতে, পরীক্ষাগারে রাখা ইমমর্টাল জেলিফিশের কলনিতে দেখা গেছে যে এরা পলিপ পর্যায়ে ফিরে যেতে পারে এবং দুই বছরে ১০ বার পর্যন্ত আবার নতুন জীবন শুরু করতে পারে। এরাই একমাত্র পরিচিত প্রজাতি যা যৌন প্রজননের পরে নিজেকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে, আর জেলিফিশকে ‘জৈবিকভাবে অমর’ করে তোলে। বিজ্ঞানীরা চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন কোন জিনের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির কারণে এই ঘটনা ঘটছে।