উভয় ডিম্বাশয় অপসারণ মস্তিষ্কের ক্ষতি ডেকে আনতে পারে

উভয় ডিম্বাশয় অপসারণ মস্তিষ্কের ক্ষতি ডেকে আনতে পারে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৭ জুন, ২০২৪

শুধু প্রজনন নয় ডিম্বাশয়ের গুরুত্ব অনেক বেশি। জরায়ুর দুপাশে ভেসে থাকা দুটি ডিম্বাকৃতির গ্রন্থি শুধু ডিমই উৎপন্ন করে না বরং যে হরমোন নিঃসরণ করে তা বয়স বাড়ার সাথে সাথে ব্যক্তিটির হৃদপিণ্ড, হাড়, মস্তিষ্ক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাই বিজ্ঞানীরা আজ উদ্বিগ্ন যে উভয় ডিম্বাশয়ের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণ সময়ের সাথে সাথে স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলতে পারে। এই বিশ্লেষণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ বছরের বেশি বয়সী ১০০০ টিরও বেশি মহিলার তথ্য অন্তর্ভুক্ত ছিল। যে সমস্ত অংশগ্রহণকারীদের ৪০-এর আগেই উভয় ডিম্বাশয় অপসারণ করা হয়েছিল তাদের, ৫০ বছরের কম বয়সী ৯০৭ জন মহিলার তুলনায় মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে হোয়াইট ম্যাটার হ্রাস পেয়েছে।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ঋতুবন্ধের আগে যে রোগীদের উভয় ডিম্বাশয় অপসারণ করা হয়েছে তাদের পরবর্তী জীবনে বৌদ্ধিক সক্ষমতা দুর্বল হয় এবং ডিমেনশিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। আজ অবধি, পুরুষ মস্তিষ্ক বেশিরভাগ স্নায়বিক গবেষণার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছে। এখনও পর্যন্ত প্রকাশিত সমস্ত ব্রেন ইমেজিং অধ্যয়নের মধ্যে, ০.৫ শতাংশেরও কম অধ্যয়নে হরমোন কীভাবে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য এবং বিকাশকে প্রভাবিত করতে পারে তা বিবেচনা করে এবং দেখার চেষ্টা করে। সাধারণভাবে দেখা গেছে, নারী মস্তিষ্কের তুলনায় পুরুষ মস্তিষ্কে হোয়াইট ম্যাটারের পরিমাণ বেশি থাকে। কিছু বিজ্ঞানী অনুমান করেন অণ্ডকোশ এবং ডিম্বাশয় দ্বারা উত্পাদিত সেক্স হরমোন মস্তিষ্কের বিকাশকে ভিন্নভাবে প্রভাবিত করে আর সেই কারণে এটি ঘটে। যদিও টেস্টোস্টেরনকে প্রায়শই পুরুষ হরমোন হিসাবে চিহ্নিত করা হয়, তবে এটি ডিম্বাশয় দ্বারাও উত্পাদিত হয় এবং মহিলাদের দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হরমোনটি মস্তিষ্কের সাদা পদার্থের অখণ্ডতার সাথেও যুক্ত। ঋতুবন্ধের আগে যদি ডিম্বাশয় শরীর থেকে বের করে দেওয়া হয়, তাহলে টেস্টোস্টেরনের অভাব মস্তিষ্কের বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আজ অবধি বহু প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি। নারীদেহে ডিম্বাশয় কী ভূমিকা পালন করে এবং সেগুলো অপসারণ করা হলে কী হতে পারে। সাম্প্রতিক প্রমাণের আলোকে, কিছু বিশেষজ্ঞ যুক্তি দেন যে অল্প বয়সে উভয় ডিম্বাশয় অপসারণের ঝুঁকি এবং সুবিধা ঠিক করে দেখা হচ্ছে না। শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে, এই অপসারণ ‘অপ্রয়োজনীয়’ হতে পারে এবং আজীবন ঝুঁকির কারণ হতে পারে। আবার প্রজনন বছরগুলোর সময় উভয় ডিম্বাশয় অপসারণ করা হলে, ঋতুবন্ধ ত্বরান্বিত হতে পারে এবং গুরুতর দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে যেমন হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস, কার্ডিওভাসকুলার রোগ, বৌদ্ধিক সক্ষমতা কমে যাওয়া, ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট এবং আর্থ্রাইটিস। সুতরাং মস্তিষ্ককে সম্ভাব্য ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে ডিম্বাশয় অপসারণ এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × five =