উলকি আঁকার কালি শরীরের জন্য ক্ষতিকারক

উলকি আঁকার কালি শরীরের জন্য ক্ষতিকারক

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৮ মার্চ, ২০২৪

শরীরের বিভিন্ন অংশ‌ে গাঢ় রঙ দিয়ে আঁকা ট্যাটু আজ নতুন প্রজন্মের কাছে নিয়ে এসেছে এক আলাদা আকর্ষণ। খোলা পিঠ, পা, হাতের ত্বকে লাল-নীল-কালো-সবুজের টান বা গোড়ালির কাছে কিংবা কব্জিতে পছন্দের কোনও লেখা বা উলকি আমরা প্রায়শই দেখতে পাই। দেশ-বিদেশের খেলোয়াড় থেকে শুরু করে আমজনতা, শরীরের নানা কোণে সাজগোজের অঙ্গ হিসেবে ট্যাটু খোদাইয়ে পিছিয়ে নেই কেউই। আমাদের ধারণা বেশিরভাগ উলকি শিল্পী স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে কাজ করে। কিন্তু এক নতুন গবেষণা থেকে জানা যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত ৯০% ট্যাটু কালির বোতলে ভুল লেবেল দেওয়া রয়েছে। গবেষণা আরও বলেছে যে এটি কোনো ছোটখাটো অসঙ্গতি নয় বরং এই কালিগুলোতে এমন উপাদান রয়েছে যা প্যাকেজিংয়ে তালিকাভুক্ত ছিল না। ট্যাটুর রঙ নির্ভর করে সেই কালিতে উপস্থিত এক বা একাধিক রঞ্জক পদার্থের উপর। আগে, উলকি আঁকার জন্য ছাই, কাঠকয়লা, খনিজ বা অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহৃত হত। তারপর ট্যাটু শিল্পীরা কৃত্রিম রঞ্জক ব্যবহার করে তাদের নিজস্ব কালি তৈরি করতে শুরু করে। বর্তমানে ট্যাটুতে ব্যবহৃত প্রায় সমস্ত রঞ্জক কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয় এবং সাদা ও কালো ছাড়া বিভিন্ন উজ্জ্বল রঙের হয়। বিগত কয়েক দশকে, উলকি আঁকার কালি তৈরিতে আর স্বতন্ত্র শিল্পীরা যুক্ত থাকে না সেই দায়ভার চলে গেছে বড়ো বড়ো কোম্পানির উপর যারা শিল্পীদের কাছে কালি বিক্রি করে। গবেষণায় মার্কিন বাজার বিক্রি হওয়া ৫৪টি ট্যাটু কালি বিশ্লেষণ করা হয়।
দেখা গেছে অর্ধেকেরও বেশি কালিতে পলিইথিলিন গ্লাইকল রয়েছে যা পিইজি নামেও পরিচিত। বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পণ্যে পিইজি থাকে। পিইজি-র কারণে অ্যালার্জি সৃষ্টি হতে পারে, তবে গবেষণা অনুসারে বারবার পিইজি-র সংস্পর্শে এলে কিডনি তার কার্যক্ষমতা হারাতে পারে। গবেষণায় ১৫টি কালিতে প্রোপিলিন গ্লাইকল পাওয়া গেছে, যদিও এটি উপাদান হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়নি। প্রোপিলিন গ্লাইকলের সংস্পর্শে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া যেমন ত্বকে ফুসকুড়ি, চুলকানি এবং ফোসকা হতে পারে। বেশ কয়েকটি কালিতে, তালিকাভুক্ত নয় এমন উপাদান খুঁজে পাওয়া গেছে যা প্রসাধন সামগ্রীতে পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে বিএইচটি, ডোডিকেন, ২-ফেনক্সিইথানল। তবে ২-ফেনক্সিইথানল সংরক্ষণকারী হিসেবে ব্যবহৃত হলেও ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সতর্ক করেছে যে এটি মায়ের দুধের উপর নির্ভরশীল শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং শিশুদের বমি ও শরীরে জলশূন্যতা হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে উলকি আঁকাতে ব্যবহৃত কার্বন ব্ল্যাক ক্যান্সার-সৃষ্টিকারী অণুর দ্বারা দূষিত হতে পারে। অনেক লাল, হলুদ এবং কমলা রঞ্জক যাতে দুটি সংযুক্ত নাইট্রোজেন পরমাণু থাকে কালিকে উজ্জ্বল, প্রাণবন্ত রঙের করলেও সময়ের সাথে সাথে কার্সিনোজেনে ভেঙে যেতে পারে। ইউরোপে তামা-যুক্ত রঞ্জক ব্লু ১৫ এবং গ্রিন ৭ ব্যবহার নিষিদ্ধ করলেও তা ট্যাটুর কালিতে পাওয়া গেছে। এই রঞ্জক ব্যবহারে মূত্রাশয় ক্যান্সার হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

9 + thirteen =