‘ডেনিসোভানস’ নামে মানুষের যে একটি প্রজাতি ছিল মাত্র এক দশক আগে জানা যায় সেকথা। সাইবেরিয়ার ডেনিসোভা গুহা থেকে অজানা প্রজাতির মানবের সন্ধান মেলে বলেই নাম হয়েছে – ডেনিসোভান। ঐ গুহার মাটি থেকে প্রাপ্ত ডিএনএ -র বিস্তৃত সমীক্ষায় জানা যাচ্ছে ঐ গুহায় আধুনিক মানব প্রজাতির পূর্ব পুরুষরাও থাকত ডেনিসোভান এবং নিয়েনডার্থাল দের পাশাপাশি। ইতিপূর্বে ডেনিসোভা গুহা থেকে প্রাপ্ত ৮ টি মানব ফসিল থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানাছিল আনুমানিক ৩ লক্ষ বছর আগে নিয়েনডার্থাল এবং ডেনিসোভানরা ঐ গুহায় বসবাস করতো। গুহার মাটির বিভিন্ন স্তরে অত্যাধুনিক পাথরে নির্মিত অস্ত্র ও গয়নাও পাওয়া যায়। কিন্তু আধুনিক মানুষের কোনো ফসিল এ গুহায় পাওয়া যায় নি। তবুও ঐ হস্তনির্মিত অস্ত্র ও গয়না, ফসিল হাড় থেকে প্রাপ্ত ডিএনএ নমুনা, এবং ইতিপূর্বে মাটির মধ্যে ডিএনএ নমুনা – ইত্যাদি জুড়ে মানব বিবর্তনের ইতিহাসে এই ডেনিসোভা গুহার গুরুত্ব অসীম।
রাশিয়ার ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট এর বিবর্তিত নৃতত্ববিদ্যার গ্র্যাজুয়েশানের ছাত্র এলিনা জাভালার মনে হয় ৮ টি ফসিল যথেষ্ট নয়। তাই এলিনা সহপাঠী ও রাশিয়ান গবেষকদের নিয়ে একটা টিম তৈরি করলেন। টিম গুহার তিনটি চেম্বার থেকে মাটির নমুনা সংগ্রহ করে দেখবে কী ধরণের ডি এন এ নমুনা মাটিতে পাওয়া যাচ্ছে। সেইমতো ঐ গুহা থেকে ৭২৮ টি মাটির স্যাম্পেল সংগ্রহ করা হলো। প্রায় ২ বছর ধরে বিস্তৃত সমীক্ষা করে দেখা গেল স্যাম্পেল গুলির মধ্যে ১৭৫টিতে মানব ডিএনএ পাওয়া গেছে। এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে মানুষ এবং অন্য প্রাণীর আচরণের জটিল ইতিহাস কীভাবে প্রকাশিত হচ্ছে এবং ডেনিসোভা গুহাতে সময়ের সাথে সাথে কীভাবে বিভিন্ন প্রজাতি এসেছে ও গেছে সে বিষয়ে গত ২১ জুন ২০২১ এ নেচার পত্রিকায় বিস্তারিত রিপোর্ট করেন এলিনা জাভালারা। জাভালাদের নতুন গবেষণা নিশ্চিত করে দিল- ডেনিসোভানরাই আনুমানিক ৩ লক্ষ বছর আগে এগুহায় প্রথম থাকত। তাদের বিলোপ ঘটে আনুমানিক ১লক্ষ ৩০ হাজার বছর আগে। নিয়েনডার্থাল রা এগুহায় আসে আনুমানিক ১লক্ষ ৭০ হাজার বছর আগে। গুহার ভিন্ন স্থান হয়তো তারা ব্যবহার করতো কিংবা ডেনিসোভানদের হটিয়েও কিছু নিয়েনডার্থাল রা বাস করতে পারে। আর আনুমানিক ৪৫ হাজার বছ আগে এ গুহায় বাস করতো আধুনিক মানব প্রজাতির পূর্বপুরুষরা। যদিও জাভালা বলেছেন, মূলত বিভিন্ন প্রজাতির ডিএনএ গুলি মাটির কোন স্তর থেকে পাওয়া যাচ্ছে তার উপর ভিত্তি করেই সময়ের হিসেব দেওয়া। সময়পর্ব বড়ও হতে পারে খানিক, ফলে হটিয়ে বাস করার ধারণাটি নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়।
ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ববিদ রন পিনহাসি বলেছেন, এই তথ্য প্রাচীন ও আধুনিক মানবের জটিল পারস্পারিক ক্রিয়ার দিকেই আমাদের ইঙ্গিত করে।