একই মানসিক সমস্যাক্রান্ত জীবনসঙ্গী

একই মানসিক সমস্যাক্রান্ত জীবনসঙ্গী

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই এমন সঙ্গীকে বিয়ে করেন, যিনি একই ধরনের সমস্যায় ভুগছেন বা ভুগেছেন। এমন প্রবণতা সংস্কৃতি, দেশ ও প্রজন্ম জুড়েই বিদ্যমান বলে প্রমাণ মিলেছে এক বৃহৎ আন্তর্জাতিক গবেষণায়। গবেষণা প্রবন্ধটি সম্প্রতি নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ার পত্রে প্রকাশিত হয়েছে। তাইওয়ান, ডেনমার্ক ও সুইডেনের প্রায় ১ কোটি ৪৮ লক্ষ মানুষের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯টি মানসিক রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ে দম্পতিদের মিল খোঁজা হয়েছিল- স্কিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিসঅর্ডার, ডিপ্রেশন, উদ্বেগজনিত ব্যাধি, অ্যাটেনশন-ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার (এ ডি এইচ ডি), অটিজম, অবসেসিভ–কমপালসিভ ডিসঅর্ডার (ওসিডি), সাবস্ট্যান্স-ইউজ ডিসঅর্ডার এবং অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা (খাবারে অনাসক্তি)। গবেষকরা দেখেছেন, একজন সঙ্গীর যদি এই মানসিক সমস্যাগুলির মধ্যে একটিও থাকে, তবে অন্য সঙ্গীর একই সমস্যা বা অন্য কোনো মানসিক সমস্যা থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। এমনকি, একই রোগে আক্রান্ত দম্পতির হার আলাদা রোগে আক্রান্ত দম্পতির চেয়ে বেশি ! এই গবেষণার সহ-লেখক গবেষক চুন চিয়েহ ফ্যান বলেন, “প্রধান বার্তাটি হলো, এই প্রবণতা দেশ, কৃষ্টি ও প্রজন্ম জুড়ে একই রকম রয়ে গেছে। এমনকি গত ৫০ বছরে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার পরিবর্তনও এ প্রবণতাকে প্রভাবিত করতে পারেনি।” তবে ও সি ডি, বাইপোলার ডিসঅর্ডার এবং অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসার ক্ষেত্রে কিছু আঞ্চলিক ভিন্নতা পাওয়া গেছে। যেমন, তাইওয়ানে বিবাহিত দম্পতিদের মধ্যে ওসি ডি থাকার হার স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশগুলির তুলনায় বেশি। গবেষকরা ১৯৩০ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া মানুষদের দশকভিত্তিক দলে ভাগ করে তাদের মধ্যে বিশ্লেষণ করেন। অধিকাংশ ব্যাধির ক্ষেত্রে দেখা গেছে, প্রতিটি দশকে একই রোগে আক্রান্ত সঙ্গী বেছে নেওয়ার সম্ভাবনা সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষত যারা মাদকাসক্তি-সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছেন, তাফের মধ্যে। এই গবেষণা সরাসরি কারণ অনুসন্ধান না করলেও, ফ্যান এটির সম্ভাব্য তিনটি কারণের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। প্রথমত, মানুষ প্রায়ই নিজেদের মতো বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সঙ্গীর প্রতি আকৃষ্ট হয়। তারা একে অপরের অভিজ্ঞতাকে ভালোভাবে বুঝতে পারেন। দ্বিতীয়ত, ‘কনভার্জেন্স’ নামে পরিচিত প্রক্রিয়ায় একই পরিবেশে বসবাস করার ফলে সঙ্গীরা একে অপরের মতো হয়ে যেতে পারেন বা অনুরূপ ব্যবহার করেন। তৃতীয়ত, মানসিক সমস্যার সামাজিক ভয় অনেক সময় মানুষের জীবনসঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রকে সীমিত করে দেয়। অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ জেনেটিসিস্ট জান ফুলারটন মনে করেন, মানসিক স্বাস্থ্যজনিত চাপ বা পারিবারিক পরিবেশ নতুন রোগের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে, যদি সঙ্গীর মধ্যে আগে থেকেই হালকা উপসর্গ উপস্থিত থাকে। যেহেতু মানসিক রোগের ক্ষেত্রে জিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাই একই ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত সঙ্গী বেছে নেওয়ার প্রবণতা ভবিষ্যৎ প্রজন্মে এসব রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, যদি দু’জন অভিভাবকেরই একই রোগ থাকে, তবে তাদের সন্তানের সেই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা এক অভিভাবকের রোগ থাকার তুলনায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। তবে গবেষক রে মনে করেন, এই তথ্যগুলো সঠিকভাবে যাচাই করার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন, যাতে চিকিৎসকরা রোগীদের জিনগত ঝুঁকি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দিতে পারেন। ভারতের তিরুবনন্তপুরমের রাজীব গান্ধী সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজির আনবিক জীব বিজ্ঞানী মৈনাক ব্যানার্জি বলেন, বেশিরভাগ মানুষ জানেন না যে, একই ধরনের মানসিক রোগে আক্রান্ত সঙ্গী বেছে নেওয়া ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই এই গবেষণার ফলাফল দম্পতিদের জিনগত পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

 

সূত্র : Spouses tend to share psychiatric disorders, massive study finds by Mohana Basu ; Nature (29 August 2025)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 − two =