এককালে সাইপ্রাসে রাজত্ব করত বামন হাতি ও জলহস্তী

এককালে সাইপ্রাসে রাজত্ব করত বামন হাতি ও জলহস্তী

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
জলহস্তী

উচ্চতায় খাটো মানুষকে বহু প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। তবে খর্বকায় প্রাণী আমরা সচরাচর দেখতে পাইনা। এমনই খাটো বা বামুন হাতি এবং জলহস্তীর দেখা মিলত সাইপ্রাসে। বিশ্বের শেষ বরফ যুগের পরের সময়কালে। সাইপ্রাস, পূর্ব ভূমধ্য সাগরের একটি দ্বীপ। ভৌগোলিকভাবে পশ্চিম এশিয়ার একটি অংশ হলেও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে এটি ব্যাপকভাবে দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপীয় ধরনের। বর্তমানে সাইপ্রাস ভূমধ্যসাগরের তৃতীয় বৃহত্তম এবং তৃতীয় সর্বাধিক জনবহুল দ্বীপ। তবে সে সময় শুধু সাইপ্রাসই নয়, ভূমধ্যসাগরের দ্বীপ যেমন ক্রিট, মাল্টা, সিসিলি, সার্ডিনিয়া এবং অন্যান্য অনেক দ্বীপে দেখা যেত বামন হাতি এবং জলহস্তী। অনেক সময় দেখা যায় মূল ভূখণ্ডের কিছু প্রজাতি, যারা দ্বীপে বসবাস করে, কম খাদ্য সম্পদ এবং শিকারীদের কারণে ছোটো আকারে বিবর্তিত হয়। ঘটনাটি আসলে বেশ সাধারণ। ইংরেজিতে একে বলে আইল্যান্ড ডোয়ার্ফিজম। দুর্ভাগ্যবশত, প্রক্রিয়াটি এই ধরনের প্রজাতিকে দ্রুত পরিবেশগত পরিবর্তনের জন্য আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। তাছাড়াও রয়েছে কিছু নতুন শিকারীর আগমন, যেমন মানুষ। সাইপ্রাসের এই বামন জলহস্তী যার বৈজ্ঞানিক নাম ফানুরিওস মাইনর ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের সবচেয়ে ছোটো বামন জলহস্তী। জেনেটিক তথ্য থেকে জানা যায় যে এটি প্রায় ১৫ লাখ বছর আগে সাধারণ জলহস্তী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিবর্তিত হয়। অন্যদিকে বামন হাতি যার বৈজ্ঞানিক নাম প্যালেওলোক্সোডন সাইপ্রিওটস তার পূর্বপুরুষের আকারের ১০%-এরও কম। এই বামন হাতির পূর্বপুরুষরা মধ্য ও শেষ প্লেইস্টোসিন যুগে ইউরোপ এবং পশ্চিম এশিয়ায় বসবাস করত। দীর্ঘকাল ধরে, কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক এবং জীবাশ্মবিদদের ধারণা ছিল যে সাইপ্রাসে এই দুটি “মেগাফনা” প্রজাতির বিলুপ্তিতে মানুষের কোনো হাত ছিল না। তারা ধরে নিয়েছিলেন যে হয় মানুষ বিলুপ্তির পরে সেই দ্বীপে পৌঁছেছিল, বা আদিম মানুষের সংখ্যা এতটাই কম ছিল যে ওই প্রজাতিদের শেষ করার ক্ষমতা তাদের ছিল না। কিন্তু সাম্প্রতিক এই গবেষণায় জানা গেছে যে মানুষ সাইপ্রাসে এসেছিল ১৪,০০০ থেকে ১৩,০০০ বছর আগে, অর্থাৎ জলহস্তী ও হাতি বিলুপ্ত হওয়ার আগে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে মানুষের সংখ্যা তার আগমনের কয়েকশ বছরের মধ্যে খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন গবেষণাটি বিভিন্ন ধরনের গাণিতিক মডেলের সংমিশ্রণে দেখেছেন ৩০০০ থেকে ৭০০০ মানুষের জনসংখ্যাও সহজেই প্রথম বামন জলহস্তী বা বামন হাতিদের বিলুপ্তির দিকে নিয়ে যেতে পারে। যদিও এই প্রাণীগুলো দীর্ঘকাল বিলুপ্ত, তবে তাদের সম্ভাব্য সংখ্যা সম্পর্কে গবেষকরা ধারণা করতে পারেন তাদের জীবাশ্ম সংক্রান্ত তথ্য থেকে তাদের ওজন অনুমান করে। বামন জলহস্তীর ওজন প্রায় ১৩০ কেজি, এবং বামন হাতির প্রায় ৫০০ কেজির মতো। এই ওজন থেকে গবেষকরা তাদের সংখ্যা, আয়ু, বেঁচে থাকা এবং বাচ্চার জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা অনুমান করেন। এই তথ্যের সাহায্যে, গবেষকরা অনুমান করেন মানুষের কারণে বামন হাতি ও জলহস্তীর বিলুপ্তির প্রক্রিয়াটি ১০০০ বছরেরও কম সময় নেয়। গবেষণার ফলাফল প্রমাণ করে যে সাইপ্রাসে পুরানো প্রস্তর যুগের মানুষেরা সম্পূর্ণ না হলেও, আংশিকভাবে মেগাফনার বিলুপ্তির জন্য দায়ী ছিল। গবেষণা আরও প্রমাণ করে পরিবেশের দ্রুত পরিবর্তনের ফলে কীভাবে এই ক্ষুদ্র মানব জনসংখ্যাও বাস্তুতন্ত্রকে ব্যাহত করতে পারে এবং বড়ো ধরনের বিলুপ্তির কারণ হতে পারে।