এক্সপ্লোডিং হেড সিনড্রোম- ঘুমের মধ্যে আওয়াজ

এক্সপ্লোডিং হেড সিনড্রোম- ঘুমের মধ্যে আওয়াজ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ঘুমের মধ্যে আওয়াজ

অনেকে আছেন যাদের চোখে কিছুতেই ঘুম আসে না। এর ফলে অনিদ্রাজনিত নানান অসুখ শরীরে বাসা বাঁধে। আবার অনেকে পর্যাপ্ত ঘুমানোর পরেও সারাক্ষণ ক্লান্তি অনুভব করেন। এই ক্লান্ত হওয়াটা কিন্তু বেশ অস্বাভাবিক। দীর্ঘ সময় আরামদায়ক ঘুমের পরেও যদি সারাক্ষণ ক্লান্ত লাগে, ঘুম পায়, তবে তা নিদ্রাজনিত অসুখ বলে চিহ্নিত করেন চিকিৎসকেরা। চিকিৎসা পরিভাষায় একে ‘স্লিপিং ডিসঅর্ডার’ বলা হয়। কিন্তু আপনি কি কখনও ঘুমের মধ্যে হঠাৎ মাথার ভিতরে একটি বোমার শব্দে জেগে উঠেছেন? তবে আপনি সম্ভবত এক্সপ্লোডিং হেড সিনড্রোমে আক্রান্ত। রোগটি একধরনের স্লিপ ডিসঅর্ডার যা সম্বন্ধে আজও ধারণা খুব কম।
এক্সপ্লোডিং হেড সিনড্রোম (EHS) প্যারাসোমনিয়া নামে পরিচিত এক ধরনের স্লিপ ডিসঅর্ডারের অন্তর্গত। প্যারাসোমনিয়ার অন্তর্গত অন্যান্য ঘুমের রোগের মধ্যে রয়েছে স্লিপ প্যারালাইসিস এবং হিপনিক জার্ক অর্থাৎ ঘুমের মধ্যে পড়ে যাওয়ার এক অপ্রীতিকর অনুভূতি। ১৮৭৬ সাল থেকে চিকিৎসকরা এই রোগের সাথে পরিচিত। শোনা যায় ফরাসি দার্শনিক এবং বিজ্ঞানী রেনে দেকার্তস এই রোগে আক্রান্ত ছিলেন। তা সত্ত্বেও, আমরা রোগটি সম্বন্ধে খুবই কম জানি। আক্রান্ত ব্যক্তিরা জাগ্রত অবস্থা থেকে ঠিক যখন ঘুমিয়ে পড়ে তাদের মাথার ভিতরে বিকট শব্দ বা একটি বিস্ফোরণের অনুভূতি হয়। EHS-এর সময় যে শব্দগুলো রোগীরা শোনেন তা পরিবর্তনশীল- যেমন বন্দুকের গুলি, দরজার আঘাত, বা চিৎকারের শব্দ। শোনা শব্দগুলো বেশ অল্প সময়ের জন্য হয় কয়েক সেকেন্ড বা তারও কম। শব্দগুলো বেশ জোরে এবং পরিবেশে তার কোনও সুস্পষ্ট বাহ্যিক উত্স থাকে না। শব্দের পাশাপাশি, কিছু রোগীর ভিজ্যুয়াল হ্যালুসিনেশন ঘটে যেমন উজ্জ্বল আলোর ঝলকানি বা তীব্র তাপের অনুভূতি বা শরীরের উপরের অংশে বৈদ্যুতিক চার্জ প্রবাহিত হওয়ার মতো অনুভূতি। তবে তথ্যের আভাবে এই রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা অনুমান করা কঠিন। গবেষণায় জানা গেছে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে রোগটি সাধারণ। এক্সপ্লোডিং হেড সিনড্রোম রোগের কারণ গবেষকদের কাছে অজানা তবে তাদের অনুমান মস্তিষ্কের স্নায়ুর কাজ করায় ব্যাঘাত ঘটলে এটি হয়ে থাকে। নামটি ভয়ংকর হলেও EHS রোগটি নিরীহ। দুর্ভাগ্যবশত, যারা এই রোগের সাথে লড়াই করছেন তাদের সম্ভাব্য চিকিত্সা বা মোকাবিলার কৌশল নিয়ে কোনও পদ্ধতিগত গবেষণা হয়নি। তবে চিকিৎসকদের মতে ঘুমের অভ্যাসের উন্নতি ও মানসিক উদ্যেগ নিয়ন্ত্রণ করলে রোগের তীব্রতা হ্রাস পেতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × five =