এক গ্লাস জল…

এক গ্লাস জল…

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৯ অক্টোবর, ২০২৪

অনেকক্ষণ ব্যায়াম করার পর আমরা প্রায়শই তৃষ্ণার্ত বোধ করি, আমাদের শরীরে রক্তের পরিমাণ কমে যায়। আমাদের মস্তিষ্কের বেশিরভাগ অংশ ব্লাড-ব্রেন ব্যারিয়ার দ্বারা আলাদা করা, ফলে ক্ষতিকারক টক্সিন এবং প্যাথোজেনকে মস্তিষ্কে সংক্রমিত হতে দেয়না। কিন্তু মস্তিষ্কের কিছু অংশ এই ব্যারিয়ারের বাইরে থাকে, যা আমাদের রক্তে যে কোনো ধরনের পরিবর্তন দ্রুত শনাক্ত করে। ব্যায়ামের সময় শরীর থেকে ঘাম বেরিয়ে যাওয়ার ফলে বা নোনতা খাবার খাওয়ার ফলে শরীরে রক্তের পরিমাণ হ্রাস পায় তখন মস্তিষ্কের এই অংশের নিউরনগুলো তৃষ্ণার অনুভূতিকে ট্রিগার করার জন্য একটি সংকেত পাঠায়। এই দ্রুত প্রতিক্রিয়া বেঁচে থাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ যদি মস্তিষ্ক প্রতিক্রিয়া দেখাতে বেশি সময় নেয়, তবে আমাদের শরীরে জলশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন দেখা দিতে পারে। মস্তিষ্কের তিনটি অংশ তৃষ্ণার অনুভূতি প্রক্রিয়া করে: সাবফর্নিকাল অর্গান (SFO), অর্গানাম ভাস্কুলোসাম ল্যামিনা টার্মিনালিস (OVLT) এবং মিডিয়ান প্রিওপটিক নিউক্লিয়াস (MnPO)। ২০১৮ সালে ইঁদুরের উপর করা একটি পরীক্ষা থেকে জানা গেছে তিনটি অংশের নিউরনই তৃষ্ণার অনুভূতি জাগ্রত করে তবে দুটি অংশ মস্তিষ্কের অন্যান্য অংশে তৃষ্ণার সংকেত প্রেরণ করে। জল পান করার প্রায় ৩০ মিনিট পর সে জল আমাদের শরীরে শোষিত হয় এবং সংবাহিত হয়। কিন্তু আমাদের শরীরে জলের সাময়িক চাহিদা মেটার অনেক আগেই আমাদের শরীর মস্তিষ্কে সংকেত পাঠাতে শুরু করে যে শরীর জল পেতে শুরু করেছে। জলের প্রথম চুমুকের সাথে সাথে আমাদের মস্তিষ্ক নিউরোট্রান্সমিটার ডোপামিন নিঃসরণ শুরু করে। বেশিরভাগ বিজ্ঞানীদের মতে ডোপামিন পুরষ্কার বা প্রেরণার সাথে সংযুক্ত। ডোপামিন আমাদের এমন কাজের জন্য শক্তি প্রয়োগ করতে প্ররোচিত করে যা আমাদের পুরস্কার দেয় বা আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে, যেমন খাবার খাওয়া, জলপান করা। ডোপামিন নিঃসরণের ফলে আমরা সেই কাজ বারংবার করি। এটি একটি ইতিবাচক সংকেত। নিউরন জার্নালে প্রকাশিত ২০১৯ সালের একটি গবেষণায়, গবেষকরা দেখেন তৃষ্ণার্ত ইঁদুর যখন জল পান করে তখন তারা ডোপামিন নিঃসরণ করে। তারা দেখেন জল পান করলে তবেই নিউরোট্রান্সমিটার নিসৃত হয়। সেই কারণে ডিহাইড্রেটেড রোগীদের ইন্ট্রাভেনাস তরল দেওয়া হলেও এই ডোপামিন নিঃসরণ হয় না। জল পান করলে ঠিক কীভাবে ডোপামিন নিঃসরণ শুরু হয় তা এখনও অজানা এবং এ বিষয়ে ভবিষ্যতে গবেষণার সুযোগ রয়েছে।