এনাড্রোমাস ভার্সেস ক্যাটাড্রোমাস/১

এনাড্রোমাস ভার্সেস ক্যাটাড্রোমাস/১

মন্দিরা পাল
Posted on ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১

ইলিশ অপহরণ রহস্যের সন্ধানে

ইলশে গুঁড়ি বৃষ্টি দিল্লিতে হয় না, আর ঘন্টার পর ঘন্টা তুমুল বৃষ্টি দেখার অভ্যাসও আমাদের নেই। কিন্তু আজ সেই আজগুবি দিন এসে উপস্থিত। আষাঢ় শ্রাবণ পেরিয়ে গিয়ে ভরা ভাদরে আকাশ ভেঙ্গে জল নেমেছে। এমন দিনে বাঙালিরা ইলিশ ভাজা আর খিচুড়ি খেতে চায়।
এ বছর দিল্লির দিকে ইলিশের আমদানি কম, বেশ বেশি রকমের কম। শুনলাম অগাস্ট মাস পর্যন্ত পশ্চিম বঙ্গে ইলিশ উঠেছে দু হাজার টন, অন্য বারের তুলনায় একের দশ ভাগ। মাছেরা নাকি ভয়ে হুগলী নদীতে না ঢুকে বাংলাদেশ, বর্মা, থাইল্যান্ড, ইত্যাদি জায়গায় দল বেঁধে বেড়াতে চলে যাচ্ছে। একে তো মোহনায় পলি পড়ে গভীরতা এতটাই কমে গেছে যে মাছেরা ইচ্ছে থাকলেও সমুদ্র থেকে উজানে আসতে পারছে না। উপরন্তু বছরের পর বছর বাচ্চা মাছেদের ধরে ধরে খেয়ে আমরা হুগলি নদীতে আসা ইলিশ প্রায় সাবাড় করে ফেলেছি।
ইলিশ ওই সামোন/salmon এর মত এনাড্রোমাস স্বভাবের মাছ। ইংরেজরা হিলসা আর তেলেগুরা ফুলসা বলে ডাকে। বড়রা সমুদ্রে বাস করলেও বাচ্চাদের জন্ম দিতে বছর বছর মিষ্টি জলে ফেরৎ আসতে হয়। তারা একটু বড় হয়ে সমুদ্রে ফিরে যায়। ছোটরা বড়দের পিছু পিছু নিয়মিত সমুদ্রে ফিরে যেতে পারল কি না তা ভেবে দেখার মানুষ কোথায়!? বড়রা জায়গামত ডিম পাড়তে পারল কি না তাই বা কে দেখছে?! একটা সময় ছিল যখন বাঙালিরা দুর্গাপুজোর দশমীর পর থেকে সরস্বতী পুজো পর্যন্ত ইলিশ খাওয়া বন্ধ রাখত। পরিবেশের প্রতি এই সহানুভূতি এখন বিরল যদিও খাতায় কলমে হুগলি নদীর মোহনায় পনেরো এপ্রিল থেকে পনেরো জুন ইলিশ ধরা বারণ। অপরিণত মাছ বাজারে আসা রোধ করতে মাছ ধরার জালের ফুটোর মাপও নির্দিষ্ট হওয়া দরকার। এ ছাড়া নদী মোহনার নাব্যতা বজায় রাখতে হবে। একবার কাগজে পড়েছিলাম নদীমুখে আসা ইলিশ ট্যাগ করা হবে, এবং ওদের প্রজননের ক্রীড়াক্ষেত্র গুলিকে সংরক্ষণ করা হবে, কিন্তু সেসব কাজ কতদূর এগোলো জানা নেই।
তবে সেসব জানার ইচ্ছেও আমাদের নেই। আমাদের শুধু বাজার থেকে এনে খাওয়া নিয়ে কথা। এক কাজ করুন না প্লিজ, বছরে গুণে দু-চারদিন ইলিশ কিনুন। মনের জোর বাড়ান, পয়সা থাকলেও খাবেন না। পারলে ওদের একটু বাঁচতে দিন, বড় হতে দিন। (চলবে)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 4 =