এমপেম্বা প্রভাবে’র রহস্য উন্মোচন

এমপেম্বা প্রভাবে’র রহস্য উন্মোচন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৯ জুন, ২০২৫

এমপেম্বা প্রভাবের মাধ্যমে একই পরিস্থিতিতে উষ্ণ সিস্টেমগুলি শীতল সিস্টেমগুলির চেয়ে দ্রুত ঠান্ডা হয়। এর কথা প্রথম উল্লেখ করেছিলেন অ্যারিস্টটল ২০০০ বছরেরও বেশি আগে । ১৯৬৩ সালে তানজানিয়ার ছাত্র ইরাস্টো এমপেম্বা এটি নতুন করে আবিষ্কার করেন। এমপেম্বা একটি স্কুলে রান্নার ক্লাসে আইসক্রিম তৈরির সময় এই ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। ইনি পরে ব্রিটিশ পদার্থবিদ ডেনিস অসবোর্নের সাথে যৌথভাবে একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র লিখেছিলেন, যেখানে জলের উপর এই প্রভাবের কথা নথিভুক্ত করা হয়েছিল। তাঁদের গবেষণার পর, গবেষকরা দেখেছেন যে এমপেম্বা প্রভাব কেবল জল বা সাধারণ তরল পদার্থের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিভিন্ন ধরণের ভৌত ব্যবস্থায় দেখা গেছে, যার মধ্যে রয়েছে আণুবীক্ষণিক ব্যবস্থা। তবে, একটি বড় অসুবিধে এখনও রয়ে গেছে। এমপেম্বা ক্রিয়া শনাক্ত করতে গেলে একটা সিস্টেম তার ভারসাম্যের দশা থেকে ঠিক কতটা দূরে রয়েছে তা মাপতে হয়। দূরত্ব মাপার এই পদ্ধতি বেছে নেওয়াটা একেবারে জরুরি।যেহেতু সম্ভাব্য দূরত্বগুলির পরিমাপ অসীম, তাই একটি পরিমাপ ব্যবহার করে যে-প্রভাব দেখা গেল, অন্য একটি পরিমাপ ব্যবহার করে কোনও সীমিত সময়ের মধ্যে তা নাও দেখা যেতে পারে। চিরাচরিত পদ্ধতিগুলিতে প্রায়শই গতি মূল্যায়ন করে শিথিলকরণ। তাপমাত্রা বদলের পরিবর্তনের পরে যে হারে একটি সিস্টেম ভারসাম্যে ফিরে আসে তাকেই ‘শিথিলকরণ গতি’ বলে। এই হারকে একটি একক, একমাত্রিক পদ্ধতিতে মাপা যেতে পারে। কিন্তু এ থেকে অসঙ্গত বা বিভ্রান্তিকর ফলাফল বেরিয়ে আসতে পারে।এই ত্রুটিগুলির মোকাবিলায় নেমেছিলেন কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক-দল। তাঁরা এমপেম্বা প্রভাবের উপস্থিতি নির্ধারণের জন্য একটি সর্বজনীন মানদণ্ড তৈরি করার কাজে নামেন। তাঁদের পদ্ধতি ‘থার্মোমোজোরাইজেশন’ নামক একটি তত্ত্বকে কাজে লাগায়। থার্মোমোজোরাইজেশন এমন এক গাণিতিক কাঠামো যা বিভিন্ন দূরত্ব পরিমাপকে একত্রিত করে। তান ভান ভু এবং তাঁর সহকর্মী হিসাও হায়াকাওয়া তাপীয় শিথিলকরণের গতি মূল্যায়নের জন্য একটি কঠোর মানদণ্ড নির্ণয় করতে সক্ষম হন। এঁরা পূর্ববর্তী গবেষণাগুলির অস্পষ্টতা দূর করেন এবং এমপেম্বা প্রভাব পরিমাপের জন্য একটি দ্ব্যর্থহীন কাঠামো প্রতিষ্ঠা করেন।

এই গবেষণা থেকে অন্য একটি চমকপ্রদ আবিষ্কারও হয়েছে। দেখা গেছে, এর প্রভাব নির্দিষ্ট তাপমাত্রার পরিসরে সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিভিন্ন তাপীয় অবস্থাতেও এটি দেখা দিতে পারে। ভু বলেন, “এই আশ্চর্যজনক ফলাফলটি থেকে এই ইঙ্গিত মেলে যে এমপেম্বা প্রভাব আগে যা ভাবা হয়েছিল তার চেয়েও বেশি সর্বজনীন এক অন্তর্নিহিত প্রক্রিয়াকে প্রতিফলিত করে ।”

এই রহস্যটির সমাধান বার করে গবেষক দলের এই অনুসন্ধানগুলি তাপীয় শিথিলকরণ গতিবিদ্যাকে নিয়ন্ত্রণকারী মৌলিক নীতিগুলি সম্পর্কে এক নতুন অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করেছে। পাশাপাশি তাপ ইঞ্জিন এবং শীতল প্রযুক্তির দক্ষতা বৃদ্ধিতে এর সম্ভাব্য প্রয়োগও হবে। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং জৈবপদার্থবিদ্যার ক্ষেত্রগুলিও এর ফলে উপকৃত হতে পারে।

তবে, তান ভান ভু এবং হায়াকাওয়ার মতে, একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এখনো রয়ে গেছে: থার্মোমোজোরাইজেশন এমপেম্বা প্রভাবের সর্বনিম্ন সময়সীমা কত হতে পারে? গতিসীমার দৃষ্টিকোণ থেকে এই দিকটি তদন্ত করলে শিথিলকরণ গতিবিদ্যার উপর একটা মৌলিক সীমাবদ্ধতা স্থাপনে সাহায্য করতে পারে।

তথ্যসূত্র:
“ Thermomajorization Mpemba Effect “ by Tan Van Vu and Hisao Hayakawa , 10 March 2025 , Physical Review Letters .
DOI: http://10.1103/PhysRevLett.134.107101

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 − 13 =