
আজকাল হঠাৎ করে, অনেকেই মনোযোগের অভাব এবং অত্যধিক ছটফটানির সম্ভাব্য লক্ষণ (এ ডি এইচ ডি ) নিয়ে
চিকিৎসকের দ্বারস্থ হচ্ছেন। এমনকি অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়াতে এ বিষয়ে নানা তথ্য-বিনোদন দেখে মনে করছেন, “হয়ত এই উপসর্গ আমারও আছে !” কিন্তু সত্যিই কি এত লোকের হঠাৎ করে বর্তমানে এ ডি এইচ ডি হচ্ছে? নাকি কোথাও বোঝার কোন গলদ আছে? এই প্রশ্নই তুলেছেন ইউনিভার্সিটি অফ কোপেনহেগেন ও সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদল। ডঃ ইগর স্টুডার্ট বলছেন, “আমরা জানতে চেয়েছিলাম, এ ডি এইচ ডি নিয়ে যেসব পরীক্ষা হচ্ছে, তাতে সত্যিই কি সঠিকভাবে এ ডি এইচ ডি শনাক্ত করা যাচ্ছে ?” নানা উপসর্গ যেমন মনোযোগে ঘাটতি, অস্থিরতা, এগুলো কিন্তু অনেক অন্যান্য মানসিক রোগেও থাকে। যেমন অবসাদ, বাইপোলার ডিজঅর্ডার, এমনকি স্কিজোফ্রেনিয়াতেও। একজন প্রশিক্ষিত মনোবিদ বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের দ্বারাই সম্পূর্ণ ও সুস্পষ্ট মূল্যায়ন করা একান্ত জরুরি। গবেষণায় দেখা যায়, এই মৌলিক ধাপটাই বহুক্ষেত্রে উপেক্ষিত! প্রফেসর জুলি নর্ডগার্ড বলছেন, “আমরা এ ডি এইচ ডি নিয়ে ২৯২টি সেরা RCT ( যদৃচ্ছ কনট্রোল ট্রায়াল) বিশ্লেষণ করেছি। আশ্চর্যের বিষয়, অর্ধেক ট্রায়ালেই রোগীদের অন্য মানসিক রোগ আছে কিনা, সেটা যাচাই করা হয়নি। ফলে অনেক রোগীর হয়তো ডিপ্রেশন বা স্কিজোফ্রেনিয়া থাকলেও থাকতে পারে, কিন্তু তাদের কেবল এ ডি এইচ ডি -এর আওতায়ই রাখা হয়”। অন্তত ৫০% গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে একাধিক মানসিক রোগ একসাথে লক্ষ্য করা গেছে। এটি এ ডি এইচ ডি নির্ণয়কে আরও অস্পষ্ট করে তোলে। শতকরা ৬১ ভাগ ক্ষেত্রে, স্পষ্ট করে বলা হয়নি কে রোগটি নির্ণয় করেছেন। দেখা যাচ্ছে, মাত্র ৩৫% ক্ষেত্রে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা মনোবিদ এই নির্ণয় করেছেন। একাধিক গবেষণায় আবার এমনও লক্ষ্য করা গেছে যে, অংশগ্রহণকারীরা নিজেরাই নিজেদের উপর এ ডি এইচ ডি পরীক্ষা করেছেন। এমনকি শুধুমাত্র কম্পিউটার মারফৎ নির্ণয় করা হয়েছে এই রোগে ভুগছেন কিনা। এইসব পদ্ধতিগত ত্রুটির ফল খুবই গুরুতর। যদি সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় না হয়, তাহলে চিকিৎসার ফলাফলও ভুল হবে। আর সেই ভুল ফলাফলই যদি নির্দেশিকা তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়, তাহলে হাজার হাজার এ ডি এইচ ডি রোগী ভুল চিকিৎসা এমনকি ভুল ওষুধ খেতে থাকবেন। ভুলে গেলে চলবেনা এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মারাত্মক হতে পারে। সুতরাং সোশ্যাল মিডিয়ায় এ ডি এইচ ডি নিয়ে যতই ভিডিও-রিল ঘোরাফেরা করুক, গবেষকরা জোর দিচ্ছেন জটিল মানসিক রোগ শনাক্তকরণের বৈজ্ঞানিক পন্থাতে। শুধু উপসর্গের মিল দেখলেই চলবে না। প্রশিক্ষিত পেশাদার, সঠিক পদ্ধতি, এবং স্বচ্ছ গবেষণা ছাড়া এ রোগের নির্ণয় খুবই ঝুঁকি পূর্ণ।