ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট

ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট

পার্থপ্রতিম মজুমদার
Posted on ১২ ডিসেম্বর, ২০২১

করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট এখানে কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই নানা প্রশ্ন উঠেছে। এই নতুন করোনভাইরাস রূপটি কি সংক্রামিত ব্যক্তি থেকে একজন অসংক্রমিত ব্যক্তিতে আরও  দ্রুততার সাথে ছড়িয়ে পড়ে? যদি আমি সংক্রামিত হই, আমি কি গুরুতর অসুস্থ হবো এবং হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে? আমি করোনা প্রতিষেধক টিকা নিয়েছি, তাও কি ওমিক্রন আমাকে সংক্রমিত করতে পারে, এসব প্রশ্ন সকলেরই মনের মধ্যে উদয় হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ”হু” এ বছরের ২৫ শে নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম এই ভেরিয়েন্টের সন্ধান পেয়েছিল। যেটিকে বলা হচ্ছে-B.1.1.529। এরপর ২৬শে নভেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভ্যারিয়েন্টিকে “ভেরিয়েন্ট অফ কন্সার্ন ” বা উদ্বেগের কারণ হিসেবে ঘোষণা করে।

COVID-19-এর প্রথম কেস রিপোর্ট হওয়ার প্রায় দু’ বছর পরে এবং করোনা ভাইরাসের বিভিন্ন রূপ, বিশেষ করে আলফা, বিটা এবং ডেল্টা – যার ফলে ২৬ কোটিরও বেশি কেস এবং ৫০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ওমিক্রন প্রথম রিপোর্ট করেছিলেন বটসোয়ানা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা। পরবর্তীকালে এই ভ্যারিয়েন্ট অতি দ্রুততার সাথে মহাদেশ গুলি অতিক্রম করে। এটি ইতিমধ্যে প্রায় ৬০ টি দেশে পাওয়া গেছে। ভারতের একাধিক শহরে  বেশ কয়েকজনকে সংক্রমিত করার খবর পাওয়া গেছে। এমনকি এর আরও বিস্তার দিন দিন পরিলক্ষিত হচ্ছে। ওমিক্রন ডেল্টা ভেরিয়েন্টের চেয়ে আরও সহজে সংক্রমণ করতে পারে কিনা তা নিশ্চিতভাবে অবশ্য‌ কেউ জানে না, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট যা ভারতে দেখা দিয়েছিল এবং ইতিমধ্যে সারা বিশ্বে কোটি কোটি মানুষকে সংক্রামিত করেছে। কিছু প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ নির্দেশ করে যে ওমিক্রন অত্যন্ত সংক্রমণ যোগ্য। দক্ষিণ আফ্রিকার গুটেঙ প্রদেশ, যার মধ্যে রয়েছে রাজধানী জোহানেসবার্গ, সেখানে পয়লা ডিসেম্বর পর্যন্ত সংক্রামিত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল প্রায় ৮ হাজার ৫০০, যা পাঁচ দিন আগের রিপোর্ট থেকে আড়াই গুণ বেশি। ইংল্যান্ডে প্রতিদিন সংক্রামিত’স সংখ্যা ডবল হচ্ছে | গত সপ্তাহে ডেনমার্কে প্রায় দশগুন বেড়েছে | এটি অনুমান করা হয়েছিল যে একজন সংক্রামিত ব্যক্তি দুটির বেশি অসংক্রমিত ব্যক্তিকে সংক্রামিত করছে, যা অতি উদ্বেগজনক বলা যেতে পারে। এটি একই এলাকায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের জন্য পরিলক্ষিত হারের প্রায় দ্বিগুণ, যা বোঝায় যে ওমিক্রন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডেল্টার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি লোককে সংক্রামিত করতে পারে। যদিও যুক্তরাজ্যে মাত্র কয়েকজন লোক ওমিক্রন দ্বারা সংক্রামিত হয়েছেন, প্রাথমিক তথ্য বলছে যে এর সংখ্যা বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী বহু সংখ্যক মানুষ এর আগে করোনাভাইরাসের বিভিন্ন রূপের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছেন। একটি বড় সংখ্যার মানুষকে সম্পূর্ণরূপে টিকা দেওয়া হলেও সেই সমস্ত ব্যক্তি কিছু মাত্রায় প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করেছেন ; তাঁদের শরীরে প্রোটিন তৈরি করতে শুরু করেছে যা তাঁদের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে। তাঁরা ভাইরাস-ব্লকিং অ্যান্টিবডি তৈরি করেছেন, যাকে বলা হয় নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি। তবে, অমিক্রন কি এখনও এই ধরনের ব্যক্তিদের সংক্রামিত করতে পারে এ প্রশ্ন থেকেই গেছে? যার উত্তর আমরা এখনও নিশ্চিতভাবে জানি না। তবে কিছু এক্সপেরিমেন্টের ফলাফল থেকে বোঝা যাচ্ছে যে মোটামুটি প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে | তা সত্ত্বেও, এমন ব্যক্তিরা গুরুতর করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকবেন। ওমিক্রন দ্বারা সংক্রামিত বেশ কয়েকজন, যাদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি পূর্বে সংক্রামিত অথবা টিকা নিয়েছিলেন, তাঁরা গুরুতর অসুখে ভোগেন নি।  বর্তমান ভ্যাকসিনগুলি কাজ নাও করতে পারে এমন কোনও দৃঢ় প্রমাণ এখনও নেই। তাই টিকা দেওয়া থাকলে আমরা গুরুতর রোগ থেকে রক্ষা পাই, যদিও বর্তমান টিকাগুলি ওমিক্রন দ্বারা সংক্রমিত হওয়া থেকে আমাদের রক্ষা নাও করে। যখন একটি করোনভাইরাস একজন ব্যক্তিকে সংক্রামিত করে, তখন এটি নিজের প্রতিলিপি বা রেপ্লিকেট তৈরি  করে। প্রতিলিপি তৈরির প্রক্রিয়া চলাকালীন এর জেনেটিক উপাদানে (RNA) সামান্য পরিবর্তন ঘটে, যাকে মিউটেশন বলা হয়। এই পরিবর্তনগুলি প্রতিলিপি করোনাভাইরাসে অব্যাহত থাকলে একটি নতুন বৈকল্পিক (variant) রূপ বিকশিত হয়। ইঙ্গিত রয়েছে যে ওমিক্রন এমন একজন ব্যক্তির মধ্যে উদ্ভূত হয়েছিল যিনি দীর্ঘকাল ধরে ডেল্টা বৈকল্পিক দ্বারা সংক্রামিত ছিলেন। ভাইরাসের পরিবর্তন এই ব্যক্তির মধ্যে জমা হয় এবং অব্যাহত থাকে। এইভাবেই ওমিক্রন চলে এসেছে ওনার থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে । মাস্ক, হাত ধোয়া, স্যানিটাইজিং এবং ভ্যাকসিন ব্যবহার করে আমাদের নিজেদের রক্ষা করতে হবে। অন্যথায়, আমরা শীঘ্রই সংক্রমণের আরেকটি তরঙ্গের মুখোমুখি হতে পারি।

পার্থপ্রতিম মজুমদার

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিকেল জিনোমিক্স। ভারত সরকার।

কল্যাণী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × four =