
বার্কলে-র ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ‘ওজ (Oz)’ নামক এক অভিনব পদ্ধতিতে রেটিনা বা অক্ষিপটের পৃথক আলোক সংবেদী কোষগুলিকে সক্রিয় করার জন্য লেজার আলোর সুনির্দিষ্ট রশ্মি ব্যবহার করেছেন। ফলত, সম্পূর্ণ নতুন এক রঙ দেখা গেছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘ওলো’। দৃষ্টিবিজ্ঞান অধ্যাপক অস্টিন রুর্ডা বলেন, “এটি ছিল গভীরভাবে সংপৃক্ত নীলচে সবুজ মতন।” এই ‘ওজ’ পদ্ধতিটি, একেবারে চোখের হাজারটি পৃথক শঙ্কু আকৃতির কোষকে নিশানা করে তাদের উদ্দীপিত করতে পারে। “এই কাঠামোটি আলোক সংবেদী কোষগুলিকে এত নিখুঁতভাবে শনাক্ত করতে, নিশানা করতে এবং উদ্দীপিত করতে পারে যে আমরা এখন মানুষের রঙ দেখার প্রকৃতি সম্পর্কে খুব মৌলিক চিন্তা উদ্দীপক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারি”। এই পদ্ধতিটি অক্ষিপটের উপর সবুজ লেজার আলোর আণুবীক্ষণিক স্পন্দনের একটি অবিশ্বাস্য রকমের পরিশীলিত প্রণালীর উপর নির্ভর করে। মানুষ তিন ধরনের শঙ্কু কোষের মাধ্যমে ভিন্ন রং দেখতে পায়। S শঙ্কু আলোর সংক্ষিপ্ত তরঙ্গদৈর্ঘ্য (নীল) শনাক্ত করে, M শঙ্কু মাঝারি তরঙ্গদৈর্ঘ্য (সবুজ) শনাক্ত করে এবং L শঙ্কু দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্য (লাল) শনাক্ত করে। কিন্তু M এবং L শঙ্কুগুলি প্রায় একই রকম আলোতে সাড়া দেয়। দুটির সক্রিয়তা-পাল্লা প্রায় ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে এক। তাই প্রাকৃতিক আলো ব্যবহার করে বিচ্ছিন্নভাবে M শঙ্কুগুলিকে উদ্দীপিত করা অসম্ভব। সহ-গবেষক রেন এনজি বলেন, “পৃথিবীতে এমন কোনও তরঙ্গদৈর্ঘ্য নেই যা কেবলমাত্র M শঙ্কুকে উদ্দীপিত করে। আমরা ভাবতে শুরু করলাম কেবলমাত্র সমস্ত এম শঙ্কু কোষগুলিকে উদ্দীপিত করলে কেমন দেখাবে ! সে কি আমাদের দেখা সব সবুজের থেকেও সবুজতম দেখাবে!” রুর্ডার-এর সাথে রেন কাজ শুরু করেন। সেই সময় রুর্ডার ইতিমধ্যেই আলোক সংবেদী কোষগুলিকে উদ্দীপিত করার একটি কৌশল তৈরি করছিলেন। তারা একসাথে হাজার হাজার কোষকে নিশানা করে এটি তৈরি করেন এবং আশা করেন যে তাঁরা এক নতুন চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা আনতে সক্ষম হবেন। ২০১৮ সালে, ওজ প্রকল্পটি এমন এক সফটওয়্যার তৈরি করে যা ডিজিটাল ছবিগুলিকে মাইক্রো লেজার সংকেতে রূপান্তরিত করতে পারে। কিন্তু সংকেতগুলি পাঠানোর আগে দলের একজনের অক্ষিপটের শঙ্কুবিন্যাসের একটি মানচিত্র প্রয়োজন। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগীরা তখন চোখের প্রতিটি শঙ্কু চিত্রিত এবং শনাক্ত করার জন্য একটি আলোক-ব্যবস্থা তৈরি করে দেন। একবার নকশায়িত হওয়া মাত্রই ওজ, স্পন্দ (পালস) ছুঁড়তে থাকে, যখন লেজার রশ্মিটি উদ্দিষ্ট শঙ্কুটির সাথে পঙক্তিবদ্ধ হয়। লেজারটি নিজে সবুজ, কিন্তু S, M এবং L শঙ্কুর নির্দিষ্ট সংমিশ্রণে সক্রিয় করার ফলে ব্যবস্থাটি যাবতীয় রঙের পরিসর তৈরি করতে পারে। কিংবা বেশির ভাগটা M শঙ্কুর উপর নিবদ্ধ রেখে ‘ওলো’ তৈরি করতে পারে। রুর্ডা এবং রেনজি সহ পাঁচজন অংশগ্রহণকারী এই নতুন রঙটিকে দেখেন এবং অন্যান্য রঙের সাথে তুলনা করেন। সকলেই ওলোকে একটি তীব্র নীল সবুজ রঙ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা তারা আগে কখনো দেখেননি। “প্রকৃতিতে সব থেকে রঙিন রংগুলি মূলত একরঙা। অন্যান্য একরঙা আলোর সাথে ওলোকে তুলনা করে আমরা সত্যি অবাক হয়ে যাই”। লেজার রশ্মিকে সামান্য ঝাঁকুনি দিয়ে শুধুমাত্র M শঙ্কুর পরিবর্তে এলোমেলোভাবে আঘাত করাতে দেখা গেল, এই ওলো রঙ অদৃশ্য হয়ে যায়।
বর্ণান্ধতা প্রভৃতি নানান চক্ষুরোগে এই আবিষ্কারের বিশেষ উপযোগিতা দেখা যাবে বলে মনে হয়।