ওস্তাদ নাবিক ম্যাজেলানিক পেঙ্গুইন

ওস্তাদ নাবিক ম্যাজেলানিক পেঙ্গুইন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৬ আগষ্ট, ২০২৫

কথিত আছে, পর্তুগিজ অভিযাত্রী ফার্দিনান্দ ম্যাজেলান যখন ১৫২০ সালে দক্ষিণ আমেরিকায় এসেছিলেন, সেই সময় স্ফিয়ানিসিডায়ি পরিবারের পেঙ্গুইনের সাথে তাঁর প্রথম পরিচয় হয়। তারই নাম অনুসারে এর নাম রাখা হয় ম্যাজেলানিক পেঙ্গুইন। এরা সমুদ্রপথে অত্যন্ত দক্ষ নাবিক। একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, তারা খাদ্য সংগ্রহ শেষে সোজা সাঁতরে না গিয়ে স্রোতের ভেলায় ভেসে বাড়ি ফেরে। ফলে কম শক্তি খরচ হয় এবং মাঝপথে খাবারও সংগ্রহ করা যায়।
ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অব অ্যানিমেল বিহেভিয়ার এবং সোয়ানসি ইউনিভার্সিটির গবেষকরা আর্জেন্টিনার এক উপকূলীয় বসতিতে ২৭টি প্রাপ্তবয়স্ক পেঙ্গুইনের চলার পথ অনুসরণ করেন। দেখা যায়, পেঙ্গুইনরা সোজা পথে না গিয়ে S আকৃতির বাঁকানো পথ অনুসরণ করে, যেটি স্রোতের গঠনের উপর নির্ভরশীল। ফলে যাত্রা দীর্ঘ হলেও শক্তি সাশ্রয় হয়, খাদ্য খোঁজার সুযোগও বাড়ে।
জি পি এস (বৈশ্বিক অবস্থান নির্ণয়ের পদ্ধতি), কম্পাস ডেটা(উপাত্ত) এবং সাগরের স্রোতের মডেল বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখেন, শান্ত জলে তারা সোজা চলে যায়, কিন্তু প্রবল স্রোতের সময় স্রোতের সাথে ভেসে গিয়ে পাশের দিকে সরেও যায়। এতে যাত্রা কিছুটা দীর্ঘ হলেও পরিশ্রম কম হয়।
ফিরতি পথে বেশিরভাগ পেঙ্গুইন ৮০% সময় ডুব দিয়ে শিকার করে। নিজেদের বাসার কাছে পৌঁছালে এদের ডুব ও শিকারের হার কমে যায়। তখন তারা নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে বেশি মনোযোগী হয়। গবেষক উইলসন জানান, অনেক পেঙ্গুইন প্রায় ৭৫ কিমি পাড়ি দিয়েও ঠিক আগের অবস্থানের মাত্র ৩০০ মিটারের মধ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়, যা অত্যন্ত নিখুঁত।
গবেষণায় আরও দেখা যায়, পেঙ্গুইনরা সরল পথ বা কোনো দুরূহ কৌশল অনুসরণ করে না, প্রবাহের সাথে মানিয়ে চলে। কখনও স্রোতের সাথে ভেসে যায়, এমনকি অনেক সময় তাদের বসতি অতিক্রম করে উপকূল বরাবর নেমে যায়।
ওরা স্রোতের গতিপ্রকৃতি বুঝতে পারে, এমনকি রাতে ফিরে আসার সময়ও দিক নির্ধারণে সফল হয়। দৃষ্টিশক্তির বাইরে ওরা দিক নির্ণয় কৌশল, গন্ধ ও শরীরের উপর স্রোতের চাপ থেকে স্রোতের শক্তি ও দিক নির্ধারণ করতে পারে বলে গবেষকদের অনুমান।

কেবল সরাসরি সাঁতার না কেটে, বুদ্ধি খাটিয়ে স্রোতে ভেসে পেঙ্গুইনরা কম শক্তি খরচ করে, অথচ নির্ভুলভাবে ঘরে ফিরে আসে। এই নমনীয় কৌশল হয়তো শুধু পেঙ্গুইন নয়, অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীদের ক্ষেত্রেও কার্যকর।

সূত্র: PLOS Biology ;(24.7.2025).

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × three =