কষ্টসহিষ্ণু গাছ –মঙ্গল গ্রহেও বাঁচতে পারে

কষ্টসহিষ্ণু গাছ –মঙ্গল গ্রহেও বাঁচতে পারে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৩ জুলাই, ২০২৪
মঙ্গল-গ্রহে-গাছ

পৃথিবী একসময় জীবনের পক্ষে অনুপযুক্ত ছিল, তার পাথুরে অনুর্বর শিলাকে উর্বর মাটিতে পরিণত করেছিল মস। ব্রায়োফাইট নামে অপুষ্পক উদ্ভিদ যা মস, লিভারওয়ার্ট, হর্নওয়ার্টস গ্রপে বিভক্ত, সেই অনুর্বর মাটিতে বৃদ্ধি পেয়ে মাটিকে পুষ্ট করেছিল। এই স্থলজ উদ্ভিদগুলো শিলা থেকে চুঁইয়ে পড়া বা শিলা থেকে প্রবাহিত পুষ্টি উপাদান ব্যবহার করে নিজেদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি জুগিয়ে সম্পূর্ণ প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকত যা অন্যান্য জীবের পক্ষে অসম্ভব ছিল। কিন্তু তারা পৃথিবীর পাথুরে সীমানা জুড়ে ছড়িয়ে গিয়ে মাটি তৈরি করেছিল, যা অন্যান্য জীবকে ধীরে ধীরে শুষ্ক জমিতে তাদের বাসস্থান তৈরিতে সাহায্য করেছিল। বিজ্ঞানীদের একটা দলের প্রস্তাব হল এই অপুষ্পক গাছগুলো মঙ্গল গ্রহে একই কাজ করতে পারে। অর্থাৎ সেই গ্রহ এই গাছের স্পর্শে কিছুটা সবুজ হতে পারে। তবে আমাদের এই প্রতিবেশী গ্রহে পৃথিবী থেকে প্রাণের প্রবর্তন করা উচিত কিনা সেই প্রশ্ন উঠে আসে।
মঙ্গলকে দ্বিতীয় পৃথিবী বানানো যায় কিনা, তা নিয়ে ভাবনা চিন্তায় চিনের পরিবেশবিদ জিয়াওশুয়াং লি এক ধরনের মসের কথা ভেবেছেন, সিনট্রিচিয়া ক্যানিনারভিস। মাটি জুড়ে ছেয়ে থাকা নরম সবুজ মসের বিপরীতে সিনট্রিচিয়া ক্যানিনারভিস মারাত্মক কঠিন জীবনধারায় অভ্যস্ত। এটা পামির, তিব্বত, মধ্যপ্রাচ্য, অ্যান্টার্কটিকার বরফ অঞ্চলে যেমন বৃদ্ধি পায় তেমন চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মরুভূমিতেও এদের দেখা যায়। -৪০০ থেকে ৬৫° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় যেমন এরা বাঁচে তেমন আপেক্ষিক আর্দ্রতা ১.৪ শতাংশ হলেও এরা বৃদ্ধি পেতে পারে। মঙ্গল গ্রহে নিরক্ষ রেখার কাছাকাছি তাপমাত্রা, চাপের পরিস্থিতি ল্যাবে তৈরি করে গবেষকরা দেখেছেন সিনট্রিচিয়া প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় জমে যায়, ঠাণ্ডা কেটে গেলেই আবার গজায়। এই চাপ তাদের ওপর কোনো খারাপ প্রভাব ফেলে না। মঙ্গল গ্রহের মতো মারাত্মক বিকিরণও সিনট্রিচিয়া-র ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না।
দ্য ইনোভেশনে প্রকাশিত গবেষণায় বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সিনট্রিচিয়া চাঁদ বা মঙ্গল গ্রহে নিয়ে গিয়ে বৃদ্ধি পায় কিনা তা ভবিষ্যতে দেখা যেতে পারে। তবে তাদের আশা একদম শুষ্ক অঞ্চলে সিনট্রিচিয়া বৃদ্ধি করে সেই অঞ্চল সবুজে মুড়ে দেওয়া সম্ভব।