কাঁটাওয়ালা টিকটিকি

কাঁটাওয়ালা টিকটিকি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
টিকটিকি

থর্নি ডেভিল বা মাউন্টেন ডেভিল নামে পরিচিত এই টিকটিকি মূলত দেখতে পাওয়া যায় অস্ট্রেলিয়াতে। সেখানকার শুষ্ক স্ক্রাবল্যান্ড বা মরুভূমির অভ্যন্তরে। তারা মরুভূমির বালি থেকে জল শোষণ করে তাদের ত্বকের মাধ্যমে। আকারে এরা ছোটো, প্রায় ৮ ইঞ্চি লম্বা। এদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বেশ চিত্তাকর্ষক। ঘাড়ের পিছনে এদের একটি উপাঙ্গ রয়েছে যা একটা নকল মাথার মতো কাজ করে। যখন এরা কোনো বিপদের সম্মুখীন হয় তখন এই টিকটিকি দেহের সামনের পায়ের মাঝখানে তাদের আসল মাথাটিকে টেনে নিয়ে নিজেকে রক্ষা করে আর শিকারীর সামনে বের করে দেয় তার নকল মাথাটি। টিকটিকিদের প্রতিরক্ষার এই পদ্ধতির এখানেই শেষ নয়। এদের দেহ স্পাইক বা কাঁটার মতো গঠন দিয়ে ঢাকা থাকে। অনেকটা গোলাপ গাছের কাঁটার মতো। শিকারীদের এই প্রজাতির টিকটিকিকে ধরতে, কামড়াতে বা গিলতে বেশ অসুবিধা হয়। তাই শিকারীরা এদের খাদ্য হিসেবে খুব একটা পছন্দ করে না। থর্নি ডেভিল যখন শিকারীর সম্মুখীন হ‍য় তখন নিজেদেরকে আরও বড়ো দেখাতে তারা তাদের বুক ফুলিয়ে রাখে। যখন তারা খোলা জায়গায় খাবার বা সঙ্গীর সন্ধানে ঘুরে বেড়ায় তারা ধীরে ধীরে শরীর ঝাঁকিয়ে হাঁটে যা শিকারীদের বিভ্রান্ত করে বলে মনে করা হয় কারণ শিকার যদি খুব দ্রুত পালিয়ে যায় তখন তার এই পলায়ন শিকারীর দৃষ্টি আরও বেশি করে আকর্ষণ করে। শিকারীদের ঠকাতে তারা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে। এই প্রজাতির টিকটিকিরা অতিরিক্ত গরমে, কঠিন পরিবেশের সাথে ভালোই মানিয়ে নিতে পারে। সূর্যের প্রখর তেজ ও অত্যধিক তাপমাত্রা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে তারা বালির মধ্যে ঢুকে থাকে। তাদের ত্বকে, আঁশের ভিতরে ভিতরে অবস্থিত চ্যানেল ব্যবহার করে তারা স্যাঁতসেঁতে বালি থেকে আর্দ্রতা শোষণ করে মুখে পাঠিয়ে দেয়। শরীরের তাপমাত্রা এবং বিপাক নিয়ন্ত্রণ করতে তারা তাদের রঙ পরিবর্তন করতে পারে। শীতল তাপমাত্রায় তাদের রঙ থাকে ফ্যাকাসে বাদামী। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে এরা হালকা হলুদ রঙের হয়ে যায় এবং আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে। সম্ভবত হালকা রঙের কারণে তাদের শরীর অতিরিক্ত গরম থেকে রক্ষা পায়। জন মিলটনের “প্যারাডাইস লস্ট” কবিতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বিজ্ঞানীরা এই প্রজাতির টিকটিকিদের বৈজ্ঞানিক নাম রেখেছে মোলোচ হররিডাস। হররিডাস একটি ল্যাটিন শব্দ যার অর্থ রুক্ষ, ভয়ঙ্কর। বাস্তবে, যদিও, এই থর্নি ডেভিলরা নিরীহ তবে পিঁপড়ে বা শিকারীদের জন্য ছবিটা অন্যরকম। আঠালো জিভ এবং শক্ত দাঁত ব্যবহার করে এরা দিনে হাজার হাজার পোকামাকড় গ্রাস করতে পারে।