কাকাপো তোতার পরজীবী সংকট

কাকাপো তোতার পরজীবী সংকট

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৮ আগষ্ট, ২০২৫

আমরা সাধারণত বিপন্ন প্রাণীর সংরক্ষণ প্রচেষ্টায় তাদের বেঁচে থাকা, তাদের আবাসস্থল পুনরুদ্ধার এবং সংখ্যা বৃদ্ধিকে গুরুত্ব দিই। কিছু ক্ষেত্রে সফলও হওয়া যায়। কিন্তু এই সাফল্যের আড়ালে লুকিয়ে থাকে এক নীরব, প্রায় অদৃশ্য ক্ষতি। যা সচরাচর জনসমর্থন বা সহানুভূতি পায় না, তা হল পোষক দেহে থাকা পরজীবীর বিলুপ্তি। নিউজিল্যান্ডের বিপন্ন কাকাপো তোতাপাখির ক্ষেত্রে এমনই এক ঘটনা ঘটেছে।
অ্যাডিলেড বিশ্ববিদ্যালয়, মানাকি হুয়েনুয়া–ল্যান্ডকেয়ার রিসার্চ এবং অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা প্রাচীন ডিএনএ ও অণুবীক্ষণ বিশ্লেষণ ব্যবহার করে ১,৫০০ বছরেরও পুরনো কাকাপোর মল পরীক্ষা করেন। তারা দেখতে পান, ১৯৯০-এর দশকের আগে কাকাপোর অন্তত ৮০ শতাংশ পরজীবী প্রজাতি হারিয়ে গেছে। মোট ১৬টি পরজীবীর মধ্যে ৯টি প্রজাতি ১৯৯০-এর আগেই বিলুপ্ত হয়েছিল, আর সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা শুরুর পর আরও ৪টি প্রজাতি হারিয়ে যায়।
ড. জেমি উডের মতে, পরজীবীরা কেবল ক্ষতিকর নয়; পোষকের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায় তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তারা নির্দিষ্ট পোষকের উপর নির্ভরশীল হওয়ায়, পোষক সংখ্যা কমে গেলে বা পরিবর্তিত হলে তারাও বিলুপ্ত হয়। অনেক সময় তারা পোষকের আগেই হারিয়ে যায়—যাকে সহ-বিলুপ্তি বলা হয়।
এখানে পরজীবীই পরনির্ভরশীল, আর পোষক হল কাকাপো। অনেক সময় পরজীবীরা পোষকের আগেই বিলুপ্ত হয়, কারণ পোষকের মধ্যে সংক্রমণের সুযোগ কমে যায়। এমনকি সংরক্ষণ প্রচেষ্টায় পোষককে ফিরিয়ে আনা গেলেও হারানো পরজীবীরা আর ফিরে আসে না। এতে অজানা প্রভাব পড়তে পারে পোষকের স্বাস্থ্যে ও পুরো বাস্তুতন্ত্রে।
পরজীবী বিলুপ্তি নিয়ে গবেষণা কঠিন, কারণ তারা হারিয়ে যাওয়ার আগে সচরাচর নথিবদ্ধ হয় না। ফলে, যখন আমরা বুঝতে পারি তারা নেই, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। এই গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে, পরজীবী বিলুপ্তি আগে যা ধারণা করা হয়েছিল তার চেয়ে অনেক বেশি ঘটে। বিপন্ন প্রজাতির বর্তমান পরজীবী সংখ্যা তাদের আসল ঐতিহাসিক বৈচিত্র্যের মাত্র একটি অংশ।
বিশ্বউষ্ণায়ন, বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তন ও জীববৈচিত্র্যের হ্রাস বাড়তে থাকায় পরজীবীসহ কম দৃশ্যমান প্রজাতিগুলির বিলুপ্তির ঝুঁকি আরও বেড়ে যাচ্ছে। ড. উড বলেছেন , পরজীবী বিলুপ্তি নথিবদ্ধ করা, এর গতি নির্ধারণ করা, এবং বর্তমানে কতগুলো পরজীবী বিপদের মুখে আছে তা অনুমান করা—এসবই একটি ‘বিশ্ব পরজীবী সংরক্ষণ’ পরিকল্পনার প্রথম ধাপ।এই গবেষণা কেবল কাকাপো নয়, বরং বিশ্বের সমস্ত বিপন্ন প্রজাতির ক্ষেত্রে পরজীবী সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার দিকে আলোকপাত করেছে।

 

সূত্র: Long-term parasite decline associated with near extinction and conservation of the critically endangered kākāpō parrot Alexander P. Boast, et.al ;Current Biology (24 July, 2025).

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × two =