কারিয়াচল্লি দ্বীপের প্রবাল প্রাচীর

কারিয়াচল্লি দ্বীপের প্রবাল প্রাচীর

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১১ জুলাই, ২০২৫

তামিলনাড়ু রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের মান্নার উপসাগরের উপকূলবর্তী রামেশ্বরম ও থুথুকুড়ির মধ্যে অবস্থিত কারিয়াচল্লি দ্বীপ। এটি ভারতের চারটি প্রধান প্রবাল প্রাচীরের একটি এবং অত্যন্ত পরিবেশ -সংবেদী সামুদ্রিক অঞ্চল হিসেবে পরিচিত।
গত কয়েক দশকে দ্রুত ক্ষয়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং আশেপাশের প্রবাল প্রাচীর ও সামুদ্রিক ঘাসের অবক্ষয়ের কারণে দ্বীপটি প্রায় ডুবে যেতে বসেছে। তামিলনাড়ু সরকার দ্বীপটিকে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষার জন্য বড় ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
আইআইটি মাদ্রাজের সমুদ্র প্রকৌশল বিভাগের জানুয়ারি ২০২৫-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৬৯ সালের তুলনায় দ্বীপের আয়তন ৭০ শতাংশেরও বেশি হ্রাস পেয়েছে। সেসময় দ্বীপের আয়তন ছিল ২০.৮৫ হেক্টর, যা ২০২৪ সালে কমে মাত্র ছয় হেক্টরের নীচে নেমে এসেছে। বর্তমানে জোয়ার ওঠার সময় দ্বীপের আয়তন ৩.১৪ হেক্টর এবং ভাটার সময় ৪.১২ হেক্টর থাকে।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, যদি এই ক্ষয় অব্যাহত থাকে, তাহলে ২০৩৬ সালের মধ্যে দ্বীপটি পুরোপুরি সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় তামিলনাড়ু সরকার “টিএন শোর ” প্রকল্প চালু করতে যাচ্ছে। ২০২৫ সালের আগস্টে এটি শুরু হবে। এই প্রকল্পের আওতায় আছে ৮,৫০০টি কৃত্রিম প্রবাল প্রাচীর স্থাপন, সামুদ্রিক ঘাস রোপণ এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা ।
এই কৃত্রিম প্রবাল প্রাচীরগুলো ফ্যারোসিমেন্ট ও স্টিল দিয়ে তৈরি ট্র্যাপিজিয়াম আকৃতির এবং এতে পুষ্টি প্রবাহ বজায় রাখার জন্য ছিদ্র রয়েছে। এগুলোর উচ্চতা ২-৩ মিটার এবং ওজন ১.৮-৩ টনের মধ্যে। এগুলো এমনভাবে স্থাপন করা হবে, যাতে দ্বীপের দিকে আসা ঢেউয়ের শক্তি কমানো যায় এবং পলিমাটি জমা পড়ে দ্বীপের ভূমি স্থিতিশীল হয়।

এছাড়া, দ্বীপের চারপাশে চার একর এলাকা জুড়ে সামুদ্রিক ঘাস রোপণ করা হবে, যা সাগরের স্রোত মন্থর করতে এবং জীববৈচিত্র্য বাড়াতে সাহায্য করবে। বিপন্ন সামুদ্রিক তৃণভোজী প্রাণী ডুগং এই সামুদ্রিক ঘাসের ওপর নির্ভরশীল। একই সঙ্গে তিন একর এলাকায় প্রবাল পুনরায় রোপণ করা হবে। সেখানে শুধুমাত্র স্থানীয় ও ক্ষয় প্রতিরোধী প্রবাল ব্যবহার করা হবে।
এই প্রকল্পের জন্য সরকার ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। কৃত্রিম প্রবাল স্থাপনের কাজ ৪৫ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হবে এবং সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকৃত ফলাফল চোখে পড়তে অন্তত এক বছর সময় লাগবে। তবে পরিবেশ অনুকূল থাকলে দ্বীপের অস্তিত্ব রক্ষা করা সম্ভব হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × two =