কার্বনকে বোতলবন্দী করতে কামাল এই খুদে যন্তর

কার্বনকে বোতলবন্দী করতে কামাল এই খুদে যন্তর

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ২২ নভেম্বর, ২০২২

সময় ফুরিয়েই আসছে। অথচ বিশ্ব উষ্ণায়নের সর্বগ্রাসী প্রকোপ থেকে নিস্তার পাওয়ার উপায় নেই যেন। জাতিসংঘও ডাক দিয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব পরিবেশের বাড়তি কার্বন ডাইঅক্সাইড বস্তাবন্দী করে আলাদা করার ফিকির মানুষকে বের করতেই হবে।
বাতাসের এই বিপুল কার্বন ডাই অক্সাইড কোনও উপায়ে আটক করে, তারপর মাটির নিচে পাথর যেভাবে জমে সে ব্যবস্থার দরকার। কিন্তু কতটা কাজের হবে বা আদৌ বাস্তবে তা সম্ভব কিনা। এসব ধন্দ থেকে গেছে।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানীরা ঐ পদ্ধতির কার্যকারিতা খুঁজতে গিয়েই একটা ছোট্ট যন্ত্র বানিয়ে ফেলেছেন। নাম দেওয়া হয়েছে ল্যাব-অন-চিপ। মানে একটা খুব কম আয়তনের যন্ত্রের ভেতর দিয়ে আণুবীক্ষণিক স্তরে বোঝা যায় কোনও পদার্থের ভেতরকার গতিবিধি আর রসায়ন। যেমন, স্লেট পাথরের একটা পাতলা ছিলকা যদি এই যন্ত্রে দেওয়া হয়, তাহলে যন্ত্রের ভেতর থাকা গ্যাস বা অ্যাসিডের সাথে কীভাবে তা বিক্রিয়া করে আর পাল্টাতে থাকে।
গবেষণাপত্রটা বেরিয়েছে ন্যাশানাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সের জার্নালে। বিশেষ কোনও ভৌগলিক অঞ্চলে কার্বন ডাইঅক্সাইড বা অন্য কোনও বর্জ্য ডাঁই করে জমানো আদৌ সম্ভব? তার একটা আন্দাজ এই গবেষণা অবশ্যই দেবে।
বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড সরিয়ে আলাদা করতে ইতিমধ্যেই অনেক প্রকল্প চলছে। এর চাহিদাও বাড়ছে দিনে দিনে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভূগর্ভে লবনাক্ত জলবাহী পাথরের স্তরে, বা তেলে বা গ্যাসের কুয়োতে ধরে রাখা হচ্ছে কার্বনকে। কিন্তু তাতে জটিল সব ভূ-রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটতে পারে, যাতে সেইসব পাথরের স্তরে আমূল বদল ঘটবে। এমনই বলছেন মুখ্য গবেষণা ইলেনিয়া বাত্তিয়াতো। ইনি স্ট্যানফোর্ডে এনার্জি রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সাথে যুক্ত।
বিজ্ঞানীরা স্বভাবতই কম্পিউটার মডেলের মাধ্যমে এই ক্রিয়া বিক্রিয়াগুলো আন্দাজ করতেন। কিন্তু আসলে ভেতরে কী ঘটছে, সূক্ষ্ম পর্যায়ে নিখুঁত ভাবে তা বোঝা যেত না। কোনও কোনও রাসায়নিক বিক্রিয়া সেকেন্ডের পলকে হয়ে যায়, আবার কোনটা বা খুবই মন্থর গতিতে চলে। বছরের পর পর ধরে ধীরে ধীরে পাথরের গঠন পাল্টাতে থাকে।
কার্বন ডাঁই করতে গিয়ে ঠিক কোন কোন ধাপ ঘটতে থাকে? সেটা বোঝার জন্যেই আট ধরণের পাথরের নমুনা দরকার ছিল গবেষক দলের। পশ্চিম ভার্জিনিয়া প্রদেশ থেকে মারসেলাস স্লেটপাথর আর টেক্সাসের উলফক্যাম্প স্লেট পাথর সংগ্রহ করা হয়েছিল। তারপর ছোট ছোট পাতলা টুকরো করে পাথর কেটে পালিশ করে একটা কাচের প্রকোষ্ঠে সেগুলো ভরা হয়। সেই চেম্বারের গায়ে কয়েকটা ছোট ফুটো দিয়ে অ্যাসিড দ্রবণ পাঠিয়ে ভেতরে কি ঘটছে দেখা হচ্ছিল। পাথরের নমুনাতে বিভিন্ন অনুপাতে ছিল সক্রিয় কার্বোনেট যৌগ। তারপর অত্যাধুনিক ক্যামেরা আর অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে নজরদারি চলল। কীভাবে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে পাথরের গঠন পাল্টে যেতে থাকে সেকেন্ডেরও কম সময়ে।
এই গবেষণা নিশ্চিত দিনেই কার্বনঘটিত সমস্যাকে বাস্তবেই কমাতে সাহায্য করবে।