১৯ শে নভেম্বর, ভোর ৫:১৫ মিনিট, শীতের সকাল, রোদ উঁকি মারার আগেই আমাদের রওনা । উদ্দেশ্য কালো হাঁস। জঙ্গলমহলের কনকনে ঠাণ্ডা উপভোগ করতে করতেই সিজুয়ার রাস্তা বেয়ে পৌঁছে গেলাম এক বিশাল জলাশয়ের কাছে, পানিসোল। মেদিনীপুর থেকে গোয়ালতোড় যাবার রাস্তায় পড়ে সিজুয়া। একদিকে শালবন, অন্যদিকে বিস্তারিত মাঠ। এই সময় মেদিনীপুরের আনাচে কানাচ জুড়ে পরিযায়ী পাখিদের বসবাস। ঘাটালে সর্বাধিক এলেও মেদিনীপুর জুড়েই পরিযায়ী পাখি থাকে শীতের দুই মাস। কয়েক পা হাঁটতেই চোখে পড়লো কিছু পাতি হাঁস, আর তাদের ভীড়েই ছিল এক অতিথি পরিযায়ী।পাতি হাঁস গুলো যেনো তাদের অতিথিকে নিয়ে ব্যাস্ত, নিজেদের এলাকা পরিদর্শন করিয়ে দিতে। কালো শরীর, হলুদ চোখ – যেনো পক্ষী সমাজের খলনায়ক। পাখিটি ছিল ‘Tufted Duck’ । যার বিজ্ঞান সম্মত নাম- Aythya fuligula. আগের বছর এ জলাশয়েই দেখে ছিলাম এদের, তোলা হয়নি ছবি। কি করে হারিয়ে ফেলেছিলাম এবছরে এসে পরিষ্কার হলো। ডুব দিতে পটু পাখিটি নিমেষে ডুবে স্থান পরিবর্তন করতে সক্ষম। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ পাখিটির দেহের বেশিরভাগ অংশই কালো রঙের, শুধুমাত্র চঞ্চুটি ধূসর নীল এবং চোখগুলো হলুদ বর্ণের । এদের মাথার পেছনে এক গুছাকৃতি পালক থাকে, যার থেকেই এদের এমন নামকরণ। স্ত্রী পাখিটির বক্ষদেশের অংশ কিছুটা হালকা ধূসর বর্ণের, যা আরো কিছু হাঁস জাতীয় পাখির ও থাকে। ‘Greater scaup’ এর সাথে এদের সদৃশ্য থাকলেও, মাথার শেষের গুছাকৃতী পালক এদের আলাদা করে। পুরুষ ও স্ত্রী পাখিটির উভয়ের দৈর্ঘ্য প্রায় সমান, 40 থেকে 45 সেমি। পরিযায়ী এই পাখিটির সর্বাধিক বিস্তার রয়েছে পশ্চিম ইউরোপ ও দক্ষিণ এশিয়াতে এবং ব্রিটিশ দ্বীপগুলোতে প্রায় সারাবছরই বিরাজ করে। বছরের নির্দিষ্ট সময়ে আমেরিকা যুক্ত রাষ্ট্র , কানাডা , আফ্রিকা সহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে পরিযান করে। সারা পৃথিবীর প্রায় 100লক্ষ বর্গ কিমি জুড়ে এরা পরিযান করে। ধীরবাহ নদী, মোহনা, বড় হ্রদ অথবা বড় জলাভূমি – যেখানে প্রচুর খাদ্যের প্রাচুর্য রয়েছে, এমন জায়গাকে এরা প্রজনন এর অনুকূল ও বাসস্থান হিসেবে চিহ্নিত করে। জলজ পোকামাকড় ও জলজ উদ্ভিদই এদের প্রধান খাদ্য। মেদিনীপুরের জঙ্গল গভীরে জলাশয়ে শীতের অতিথি হিসেবে কয়েকটা মাস কাটিয়ে আবারো ফিরবে জন্মস্থানে প্রজননের প্রয়োজনে।