কিডনি রক্ষক মাইক্রো -আরএনএ

কিডনি রক্ষক মাইক্রো -আরএনএ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

কিডনির রোগে ভুগছেন এমন অগণিত মানুষদের জন্য এক বিশাল সুখবর দিলেন ইউনিভার্সিটি অব মন্ট্রিয়াল হসপিটাল রিসার্চ সেন্টারের বিজ্ঞানীরা। তাঁরা আবিষ্কার করেছেন এক বিশেষ ধরনের মাইক্রো আর এন এ, যা কিডনির সূক্ষ্ম রক্তনালীকে আঘাতের পরও রক্ষা করতে পারে। এই অসাধারণ আবিষ্কার ভবিষ্যতে কিডনির রোগের আগাম শনাক্তকরণ ও তার প্রতিরোধে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। এই আবিষ্কার কানাডার চার মিলিয়নেরও বেশি কিডনি বৈকল্যে আক্রান্তের পাশাপাশি বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের জন্য আশার আলো জাগিয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, miR-423-5p নামের এই মাইক্রো-আরএনএ রক্তপরীক্ষার মাধ্যমে কিডনির ক্ষুদ্র রক্তনালীর স্বাস্থ্য নির্ণয় করতে সক্ষম। কিছুদিন আগে পর্যন্তও চিকিৎসকদের হাতে এরকম কোনো নির্ভরযোগ্য জৈব নির্দেশক ছিল না। ফলে কিডনির রোগ ধরা পড়ত দেরিতে, যখন হয়তো ক্ষতি অনেকটাই হয়ে গেছে।

এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে জে সি আই ইনসাইট জার্নালে। প্রকল্পটির নেতৃত্ব দিয়েছেন মন্ট্রিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মেরি-জোসে হেবার্ট ও ড. হেলোয়িস কার্ডিনাল, যাঁদের সঙ্গে সহযোগী গবেষক হিসেবে যুক্ত ছিলেন ফ্রান্সিস মিগনল্ট।

আমাদের কিডনিতে অসংখ্য পেরিটিউবুলার কৈশিক রক্তনালী থাকে। এগুলো রক্ত থেকে বর্জ্য ছেঁকে বের করে দেয় এবং একই সঙ্গে কিডনিকে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে। কিন্তু বড় কোনো অস্ত্রোপচার, প্রতিস্থাপন বা সাময়িক রক্তপ্রবাহ বন্ধ হওয়ার ঘটনায় এই সূক্ষ্ম রক্তনালীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আর তাতেই কিডনির কার্যক্ষমতা মারাত্মকভাবে কমে যায়।

ড. হেবার্টের বলেছেন,“এই জৈব নির্দেশকটি ব্যবহার করে আমরা অনেক আগেই বুঝতে পারব কিডনির সূক্ষ্ম রক্তনালীগুলো কেমন আছে। এর ফলে বয়স্ক রোগী, কিডনি প্রতিস্থাপিত রোগী কিংবা হার্ট সার্জারিতে যাঁদের রক্তপ্রবাহ বন্ধ করতে হয় তাঁদের জন্য চিকিৎসা অনেক কার্যকর হয়ে উঠবে।”

প্রথমে ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালানো হয়। সেখানে দেখা যায়, আঘাতপ্রাপ্ত কিডনির রক্তে miR-423-5p-এর মাত্রা ওঠানামা করছে। এরপর ৫১ জন কিডনি প্রতিস্থাপনপ্রাপ্ত রোগীর রক্তেও একই ফলাফল পাওয়া যায়।

সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, এই মাইক্রো-আরএনএ সরাসরি কিডনিতে প্রবেশ করানো হলে ক্ষুদ্র রক্তনালীগুলো অক্ষত থাকে এবং কিডনির ক্ষতিও সীমিতই হয়।

যদিও প্রতিস্থাপনের সময় কিডনিতে সরাসরি ইনজেকশন দেওয়া সম্ভব, কিন্তু গবেষকরা এখন খুঁজছেন আরও সহজ উপায়।যেমন একটি মাইক্রো-আরএনএ মিশ্রণ তৈরি করে তা রক্তের মাধ্যমে কিডনিতে পৌঁছে দেওয়া।

তবে এখানেই শেষ নয়। এই জৈব নির্দেশক কেবল কিডনি নয়, হৃদ্‌যন্ত্রের ব্যর্থতা, ফুসফুস বিকল হওয়া কিংবা স্নায়বিক অবক্ষয়জনিত রোগেও কার্যকর হতে পারে। কারণ এসব অবস্থায়ও সূক্ষ্ম রক্তনালীর ক্ষতি অন্যতম বড় কারণ।

ড. হেবার্ট বিশ্বাস করেন, এই আবিষ্কার শুধু কিডনি নয় ,মানবদেহের বহু গুরুতর রোগের চিকিৎসায় নতুন দিশা দেখাতে পারে। সহজ ভাষায়, একটি ক্ষুদ্র জেনেটিক অণু হয়তো আগামীতে কোটি কোটি মানুষের জীবন বাঁচাতে পারবে।

 

সূত্র : “Endothelial extracellular vesicle miR-423-5p regulates microvascular homeostasis and renal function after ischemia-reperfusion injury” by Francis Migneault, Hyunyun Kim, et.al; (22.05.2025), JCI Insight.

DOI: 10.1172/jci.insight.181937

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

10 + two =