ভোজনরসিকদের খাদ্যতালিকা থেকে মাংস একেবারে ছেঁটে ফেলা দুরূহ। তবে জানেন কী প্রায়শই রেড মিট বা প্রক্রিয়াজাত মাংস খেতে শুরু করেন, তবে তা টাইপ ২ ডায়াবিটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে। বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাত মাংস বা অপ্রক্রিয়াজাত রেড মিট। এমন তথ্যই দিচ্ছে দ্য ল্যানসেট ডায়াবেটিস এবং এন্ডোক্রিনোলজি। প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক দশকে বিশ্বব্যাপী মাংসের উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। আর বহু দেশে খাদ্যতালিকাগত নির্দেশিকাকে ছাড়িয়ে গেছে মানুষের মাংস খাওয়ার প্রবণতা। জানা যাচ্ছে রেড মিটে প্রচুর পরিমাণে ‘হিম আয়রন’ আছে যা বেশি মাত্রায় শরীরে গেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বহুগুণে বেড়ে যেতে পারে। আবার সাধারণ মাংসকে প্রক্রিয়াজাত করে তোলার জন্য বেশ কিছু পদ্ধতি, নুন এবং রাসায়নিক ব্যবহার করতে হয়। মাংস সংরক্ষণ করার জন্য নাইট্রেটস এবং নাইট্রাইট্সের মতো রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। ওই প্রক্রিয়াজাত মাংস দীর্ঘ দিন ধরে খেলে, তার মধ্যে থাকা রাসায়নিকগুলো শরীরের মধ্যে নানা রকম বিক্রিয়া ঘটায়। মুরগি, টার্কি বা হাঁসের মাংস খাওয়া প্রায়শই প্রক্রিয়াজাত মাংস বা অপ্রক্রিয়াজাত রেড মিটের বিকল্প হিসাবে বিবেচনা করা হয়, তবে খুব কম গবেষণায় পোল্ট্রির মাংস খাওয়া এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের মধ্যে সম্পর্ক পরীক্ষা করা হয়েছে।
প্রক্রিয়াজাত মাংস, অপ্রক্রিয়াজাত রেড মিট ও পোল্ট্রির মাংস খাওয়া এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ করতে, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ২০টি দেশের ৩১টি স্টাডি কোহর্ট থেকে তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। তাদের বিশ্লেষণে বয়স, লিঙ্গ, স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত আচরণ, শক্তি সংগ্রহ এবং বডি মাস ইনডেক্সের মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়েছে। গবেষকরা দেখেন প্রতিদিন ৫০ গ্রাম প্রক্রিয়াজাত মাংস খেলে পরবর্তী ১০ বছরে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ১৫% বেশি। দিনে ১০০ গ্রাম অপ্রক্রিয়াজাত রেড মিট খেলে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ১০% বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে প্রায়শই ১০০ গ্রাম পোল্ট্রির মাংস খেলে টাইপ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ৮% বৃদ্ধি পায়। কিন্তু পরবর্তী ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে যখন ফলাফলগুলো পরীক্ষা করে আরও বিশ্লেষণ করা হয় তখন পোল্ট্রি খাওয়ার সঙ্গে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কম প্রমাণিত হলেও প্রক্রিয়াজাত মাংস ও সাধারণ রেড মিট খাওয়ার সঙ্গে ভবিষ্যতে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা দেখা গেছে। গবেষণায় তাই টাইপ২ ডায়াবেটিসের প্রবণতা কমাতে প্রক্রিয়াজাত মাংস এবং অপ্রক্রিয়াজাত রেড মিটের ব্যবহার সীমিত করার পরামর্শ দিয়েছে।