কুঁজো তিমির মাছ-ধরা জাল

কুঁজো তিমির মাছ-ধরা জাল

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, সাতটি দাঁতহীন বেলিন প্রজাতির তিমির মধ্যে কেবল কুঁজওয়ালা তিমিই বিশেষ ভঙ্গিমায় ঘুরে শিকারকে জালে ফেলতে পারে। একে বলে বুদবুদ জাল পেতে খাবার ধরা (“বাবল-নেট ফিডিং”)। এই কৌশলে তিমিরা জলে বুদবুদ ছড়িয়ে একটি বৃত্ত তৈরি করে, যেখানে ছোট মাছ বা ক্রিল আটকা পড়ে যায়।
গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যামেরন নেমেথ। তিনি হাওয়াই ইনস্টিটিউট অব মেরিন বায়োলজির (এইচ আই এম বি ) মেরিন ম্যামাল রিসার্চ প্রোগ্রামের অঙ্গ হিসেবে কাজটি করেছেন। ড্রোন এবং নন-ইনভেসিভ সাকশন-কাপ ট্যাগ (অনাক্রমণাত্মক শোষক পদার্থ) ব্যবহার করে তারা তিমির ঘূর্ণন ক্ষমতা মেপেছেন। দেখা গেছে, অন্য কোনো বেলিন তিমিই বুদবুদ জাল তৈরির মতো ঘূর্ণন দক্ষতা অর্জন করতে পারে না।
এই কুঁজো তিমিদের বুকের পাখনা থাকায় তারা সহজে ও দক্ষতার সঙ্গে ঘুরতে পারে। অন্য তিমিদের দেখতে পারদর্শী মনে হলেও তাদের শারীরিক গঠন বুদবুদের জালকে অকেজো করে তোলে। কুঁজওয়ালা তিমিদের এই অভিযোজন তাদের শিকার কৌশলে অসাধারণ সুবিধা দিয়েছে, বিশেষত ছোট ও ছড়িয়ে থাকা মাছ ধরার ক্ষেত্রে।

বেলিন তিমিদের দাঁত নেই, কেরাটিন দিয়ে তৈরি চিরুনির মতো বেলিন প্লেট আছে। এগুলো দিয়ে তারা মুখভর্তি জল ছেঁকে নিয়ে ভেতরে আটকে ফেলে ক্ষুদ্র প্রানী শিকার করে, যেমন ক্রিল, প্ল্যাঙ্কটন ও ছোট মাছ। নীল তিমি প্রতিদিন কয়েক টন ক্রিল খেতে পারে। তবে এরা সারা বছর খায় না; নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে খাদ্যে ভরা জলাশয়ে গিয়ে পেট ভরে খায়, আর শীতকালে উষ্ণ জলে বংশবিস্তার করতে গিয়ে না খেয়েই থাকে।

নেমেথের গবেষণায় দেখা গেছে, এই তিমিদের বড়ো পাখনা তাদের ঘূর্ণনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির প্রায় অর্ধেক সরবরাহ করে। ফলে তাদের শক্তি খরচ কম হয়, যা অন্য তিমিদের জন্য অসম্ভব।
এই আবিষ্কার হাওয়াই অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে শীতকালে কুঁজো তিমিরা আসে, কিন্তু খায় না। তারা আলাস্কায় সঞ্চিত চর্বি ও শক্তির ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে। তাই তাদের শিকার দক্ষতা অনুধাবন করা মানে তাদের স্বাস্থ্য, শক্তি ও টিকে থাকার সম্ভাবনা বোঝা। পরিবেশ পরিবর্তনের ফলে যদি শিকার কমে যায়, তবে তার সরাসরি প্রভাব পড়বে তাদের বেঁচে থাকার ওপর।
এই গবেষণাটি শুধু বিজ্ঞানেই সীমাবদ্ধ নয়, সংস্কৃতিকেও সম্মান জানিয়েছে। নেমেথ তাঁদের গবেষণার সারসংক্ষেপ হাওয়াইয়ান ভাষায় অনুবাদ করেছেন—যা এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এ থেকে বোঝা যায়, আধুনিক বিজ্ঞান স্থানীয় ঐতিহ্যকে পাশে নিয়েই এগোতে পারে, আর তাতে জনসচেতনতা ও সংরক্ষণ প্রচেষ্টাও শক্তিশালী হয়।

সূত্র: 69th Biophysical Society Annual Meeting in Los Angeles.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 + 1 =