কৃত্রিম জীবন্ত কোষ

কৃত্রিম জীবন্ত কোষ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১২ আগষ্ট, ২০২৫

নিষ্প্রাণ অজৈব পদার্থ থেকে কীভাবে জীবনের উৎপত্তি হল, সেটা বিজ্ঞানজগতের এক মস্ত অসমাধিত ধাঁধা। সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সান দিয়েগোর একদল গবেষক এ বিষয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করেছেন। তাঁরা একটি কৃত্রিম কোষ তৈরি করেছেন, যার আচরণ জীবন্ত কোষের মতো, যা স্বতন্ত্র রূপে বিপাকক্রিয়া চালাতে পারে। সাধারণভাবে, বিজ্ঞানীরা জীবনের তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্যকে স্বীকৃতি দেন:
1. কম্পার্টমেন্টালাইজেশন (আলাদা প্রকোষ্ঠে বিভক্ত হওয়া) অর্থাৎ কোষের ভেতরের ও বাইরের পরিবেশের মধ্যে সীমানা তৈরি করা।
2. মেটাবলিজম (বিপাকক্রিয়া) অর্থাৎ কোষের মধ্যে সক্রিয় যে-রাসায়নিক প্রক্রিয়া কোষের গঠন ও টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয়।
3. সিলেকশন (নির্বাচন) অর্থাৎ কিছু অণু প্রাকৃতিকভাবে অন্যদের তুলনায় বেশি কার্যকর হওয়ায় টিকে থাকে।
এতদিন গবেষণা হয়েছে কোষের সীমা (প্রকোষ্ঠ) নিয়ে। এবার গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু ছিল বিপাকক্রিয়া (মেটাবলিজম) । লক্ষ্য হল, জটিলতর জৈব বিবর্তন ঘটার আগে নিতান্ত সাধারণ রাসায়নিক ব্যবস্থায় বিপাকক্রিয়া ঘটতে পারে কিনা তা জানা। এমন এক ব্যবস্থা তৈরি করা হল, যেখানে শুধুমাত্র অজৈব উপাদান ব্যবহার করে কোষের লিপিড (চর্বিজাতীয় অণু) পর্দা বানানো এবং ভাঙা যায়। এ থেকে বোঝা যায়, জীবন সৃষ্টির আগে রাসায়নিক পদার্থ নিজেরাই কীভাবে পরিবর্তিত হয়ে সজীব বস্তুর মতো আচরণ করতে পারে। জীবন্ত কোষগুলি কীভাবে বিবর্তিত হয়েছিল তা বোঝার জন্য প্রধান গবেষক ডঃ নীল দেবরাজ তাঁর গবেষণাগারে এক নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। এ পদ্ধতিতে ফ্যাটি অ্যাসিড একটি রাসায়নিক শক্তি উৎপাদক(জ্বালানী) দ্বারা সক্রিয় হয়ে উঠে লাইসো-ফসফো-লিপিডের সঙ্গে মিশে ফসফোলিপিড তৈরি করে, যা নিজেই ঝিল্লি /পর্দা গড়ে তোলে। কিন্তু জ্বালানী না থাকলে ঝিল্লিগুলো আবার ভেঙে গিয়ে প্রাথমিক উপাদানে ফিরে যায়। অর্থাৎ, লিপিডগুলি কেবল ঝিল্লি গঠনই নয়, বিপাকক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের ভেঙেও ফেলতে পারে। এই আবর্তনশীল রাসায়নিক চক্রই একটি সহজতর জীবনের নমুনা তৈরি করে। পরীক্ষাটি বায়ুরুদ্ধ পরিবেশে করা হয়। তার অর্থ, কেবল অজৈব পদার্থই এক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছিল। প্রাক-জৈবিক পৃথিবীতে কেবল নিষ্প্রাণ পদার্থেরই অস্তিত্ব ছিল; সেই সময় জীবনের উদ্ভব কীভাবে হয়েছিল তা বোঝার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। গবেষক ডঃ নীল দেবরাজ এবং প্রথম লেখক আলেসান্দ্রো ফ্রাকাসসি জানিয়েছেন, তাঁদের লক্ষ্য এমন একটি প্রাথমিক কিন্তু কার্যকর কৃত্রিম কোষ নির্মাণ, যেটি হবে একেবারে প্রাথমিক স্তরের জীবকোষ, যার পর্যায়ক্রমে জটিলতা অর্জন করার ক্ষমতা থাকবে।
জীবনের উৎস নিয়ে আলোকপাত করা ছাড়াও এই গবেষণা ভবিষ্যতে ওষুধ পরিবহন, জৈব-ম্যানুফ্যাকচারিং, দূষণরোধ, ও সেন্সর প্রযুক্তিতেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা দায় ।
সূত্রঃ “Abiotic lipid metabolism enables membrane plasticity in artificial cells” by Alessandro Fracassi, et al;(22.5.2025), Nature Chemistry.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 5 =