কৃত্রিম নয়, স্বাভাবিক বুদ্ধিই শ্রেয়

কৃত্রিম নয়, স্বাভাবিক বুদ্ধিই শ্রেয়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৮ জুন, ২০২৫

এম আই টি-এর মিডিয়া ল্যাবের স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষজ্ঞদের গবেষকদলটি সম্প্রতি এক গবেষণা করেছেন। তাঁরা দেখিয়েছেন, লেখালেখির কাজে চ্যাটজিপিটির ব্যবহার মানুষের বিশ্লেষণাত্মক সূক্ষ্ম চিন্তনের দক্ষতা কমিয়ে দিচ্ছে, বিবর্ণ হয়ে পড়ছে স্বাধীন চিন্তা। গবেষণাটি আরক্সিভ প্রি-প্রিন্ট সার্ভারে প্রকাশিত হয়েছে এবং এতে অংশ নেন ৫৪ জন স্বেচ্ছাসেবক।

গবেষকরা একটি পরীক্ষা করেন যেখানে সবাইকে ২০ মিনিটে একটি প্রবন্ধ লিখতে বলা হয় মানবপ্রীতির বিষয়ে। অংশগ্রহণকারীদের তিনটি দলে ভাগ করে দেওয়া হয়। তাদের নির্দেশ দেওয়া হয় : প্রথম দল চ্যাটজিপিটির সহায়তায়, দ্বিতীয় দল গুগল ট্রান্সলেটর ব্যবহার করে এবং তৃতীয় দলটি নিজের জ্ঞানবুদ্ধি ব্যবহার করে বিষয়টি লিখবে। লেখার সময় সকল অংশগ্রহণকারীকে ইলেক্ট্রো এনসেফালোগ্রাম(EEG) মনিটর দিয়ে সংযুক্ত করা হয়, যাতে তাদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা যায়, বিশেষত মস্তিষ্কের জটিল সংযোগ, মানসিক চাপ ও মনোযোগ কতটা ব্যবহার হচ্ছে তা পরিমাপের জন্য। একই সঙ্গে প্রবন্ধগুলোকে বিশ্লেষণ করা হয় স্বাভাবিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণ, শিক্ষক কর্তৃক মূল্যায়ন ও কৃত্রিম বুদ্ধ্বিমত্তা দ্বারা। দেখা যায়, যারা নিজেদের মাথা খাটিয়ে লিখেছে সেই দলের মস্তিষ্কে ছিল সবচেয়ে বেশি সক্রিয়তা ও সংযোগ। গুগুল ব্যবহারকারী দলের সক্রিয়তা ছিল মাঝারি মাত্রার আর চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীদের ছিল সবচেয়ে কম। তিনটি পর্বের পর ১৮ জন অংশগ্রহণকারীকে আবার ডাকা হয় চতুর্থ পর্বের জন্য। আগের বার যারা আগে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করেছিলেন তাঁরা এবার নিজের অর্জিত জ্ঞানের ভিত্তিতে লেখেন। বাকিরাও আগের বারের থেকে উল্টোটা। দেখা যায় , যারা আগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করেছিলেন তাদের স্নায়বিক সংযোগ দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং স্মৃতিশক্তির কার্যকারিতাও কমে গেছে।
অদ্ভুত ব্যাপার হল, চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীরা নিজেদের প্রবন্ধ নিয়ে কম আত্মবিশ্বাসী, প্রবন্ধে কি লিখেছিলেন তা মনে করতেও তাদের বেশ অসুবিধা হচ্ছিল এবং তাদের লেখায় নিজস্ব বোধের অনুভূতিও কম ছিল। অন্যদিকে, যারা নিজে চিন্তা করে লিখেছিল তাদের ভাষার গঠন ও চিন্তার গভীরতা ছিল বেশি।এই গবেষণা শিক্ষাক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারের দীর্ঘমেয়াদি কু-প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করে। তাৎক্ষণিক সুবিধা পেলেও, এর ঘন ঘন ব্যবহার, নিজস্ব আগ্রহে জানা ও শেখার ইচ্ছেটাই নষ্ট করে দিতে পারে, মানুষের স্বাধীনভাবে চিন্তা ও বিশ্লেষণের ক্ষমতা হ্রাস করতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × five =