হলিস ক্লাইন আর মিসাকি হিরামোতোর নেতৃত্বে স্ক্রিপ্স রিসার্চ-এর বিজ্ঞানীরা ‘মুভিনেট’ নামে নতুন একটা কৃবু (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) মডেল তৈরি করেছেন। বাস্তবে একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘটে-যাওয়া ঘটনার চিত্রমালা যেভাবে একের পর এক মস্তিষ্কের মধ্যে প্রতিভাত ও উপলব্ধ হয়, মুভিনেট-ও তার ভিডিওর সাহায্যে সেই কাজটা করে। মস্তিষ্ক-কোষের ক্রিয়া অনুকরণ করাই এর কাজ। প্রচলিত কৃবু মডেলগুলি স্থিরচিত্র শনাক্তকরণের কাজে খুব পটু। কিন্তু মুভিনেট মেশিন-লার্নিঙের-যে নতুন পন্থা উদ্ভাবন করেছে তাতে জটিল ও বদলে-বদলে-যাওয়া দৃশ্যগুলিকেও শনাক্ত করা যাবে। ক্লাইন আর হিরামোতো প্রথমে অনুসন্ধান করেন কীভাবে মস্তিষ্ক বাস্তবে ছোটো ছোটো দৃশ্যপর্যায়গুলি দেখে ও অনুধাবন করে। এর জন্য তাঁরা ব্যাঙাচিদের মস্তিষ্ককোষে আলো পড়লে তারা কীভাবে সাড়া দেয় তা পরীক্ষা করেন। যেসব নিউরন (মস্তিষ্ককোষ) আলোর কমা-বাড়া, চিত্রের ঘূর্ণন শনাক্ত করতে পারে, বস্তুগুলি জায়গা বদলালে কিংবা নিজেরা বদলে গেলেও তাদের শনাক্ত করতে পারে, তাদের চিহ্নিত করেন। মস্তিষ্কের যে-অঞ্চলটি এই দৃশ্য-প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে যুক্ত, তাকে বলে ‘অপটিক টেক্টাম’। ওই অঞ্চলেই এই শনাক্তকারী নিউরনগুলির অবস্থান। চলমান চিত্রের টুকরোগুলিকে জোড়া দিয়ে এইসব নিউরন একটা অর্থবহ দৃশ্য-পর্যায় গড়ে তোলে। তাঁরা আরও দেখলেন, ব্যাঙাচিদের অপটিকাল টেক্টামে অবস্থিত নিউরনগুলি সময়ের সঙ্গে তাল রেখে দৃশ্য-ঘটিত উদ্দীপনাগুলির সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম পরিবর্তনও চিনতে পারে। তারা আলো-ছায়ার নকশার প্রতি অত্যন্ত সংবেদি। দৃশ্যক্ষেত্রের একেকটি সুনির্দিষ্ট অংশের প্রতি প্রতিটি নিউরন সাড়া দেয় আর তারই সুবাদে গড়ে তোলে একটা দৃশ্যের বিস্তারিত মানচিত্র। ক্লাইন এবং হিরামোতো মস্তিষ্ক-কোষের এই ক্রিয়াটি মুভিনেটকে শিখিয়ে দিয়েছেন। ঠিক শিখেছে কিনা তা পরীক্ষা করবার জন্য তাকে বিভিন্ন অবস্থায় সাঁতার-কাটা ব্যাঙাচিদের ছোটো ছোটো ভিডিও দেখানো হয়। দেখা গেল মুভিনেট স্বাভাবিক আর অস্বাভাবিক সাঁতারের প্রভেদ ৮২.৩% ক্ষেত্রে নির্ভুলভাবে ধরতে পারছে। শুধু তাই নয়, প্রশিক্ষিত মানুষ-পর্যবেক্ষকের তুলনায় তাদের নৈপুণ্য প্রায় ১৮% বেশি। এর নৈপুণ্য গুগ্লনেট-কেও ছাপিয়ে গেছে, এত বিপুল প্রশিক্ষণ আর সহায়সম্বল থাকা সত্ত্বেও যার সাফল্য-মাত্রা ৭২%-র বেশি নয়। দৃশ্য তথ্যকে কতকগুলো মূল টুকরোয় ভেঙে নিয়ে সংহত রূপ দেয় মুভিনেট, অনেকটা জিপ-ফাইলের মতো। প্রচলিত কৃবু মডেলগুলো প্রচুর শক্তি খায়, পরিবেশের ওপর যার ব্যাপক কুপ্রভাব পড়ে। মুভিনেট কিন্তু নৈপুণ্য বিসর্জন না দিয়েই শক্তি সঞ্চয়ের কাজে সাহায্য করবে। হার্টের অসুখের শুরুতে হৃদ্স্পন্দনের এলোমেলো ছন্দকে সে চিহ্নিত করতে পারবে। পার্কিনসনস ডিজিজের প্রাথমিক পর্যায়ের স্নায়বিক অবক্ষয়ের চিহ্নগুলিকেও শনাক্ত করতে পারবে, যেগুলো মানুষের চোখে চট করে ধরা পড়ে না। তাছাড়া শরীরের ওপর ওষুধের চলমান ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সূক্ষ্মভাবে নিরূপণের কাজেও তারা পটু। ক্লাইন ও হিরামোতোর মতে, সজীব প্রাণীর মতো ভাবনাচিন্তা করতে পারে এমন মডেল তৈরি করতে পারলে নৈপুণ্যর এমন উচ্চ মাত্রা অর্জন করা যাবে যা প্রচলিত ধারার কৃবুর পক্ষে এক কথায় অসম্ভব।
সুত্র: https://indiaai.gov.in/article/scientists-develop-an-ai-model-that-mimics-human-brain-function