কৃষিকাজ সমগ্র বাস্তুতন্ত্রকে বদলে দিচ্ছে

কৃষিকাজ সমগ্র বাস্তুতন্ত্রকে বদলে দিচ্ছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

প্রকৃতিতে সর্বত্র, প্রাণীরা তাদের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে চেষ্টা করে। পরিবেশের উপর নির্ভর করে, তাদের বৃদ্ধি দ্রুত বা ধীর হয়, তাদের শরীরের আকার বড়ো বা ছোটো হয় তাদের প্রজনন ক্ষমতাও পরিবেশের সাথে সমতা রেখে হয়। এই ক্ষেত্রে দুটি কারণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে- পুষ্টির প্রাপ্যতা, এবং “বিঘ্নকারী” বাহ্যিক প্রভাবের পরিমাণ। অনেকটা সেই খরগোশ আর কচ্ছপের দৌড় প্রতিযোগিতা জেতার গল্পের মতো। এক্ষেত্রে তফাত একটাই। পরিবেশের উপর নির্ভর করে কখনও কচ্ছপের প্রকৌশল দৌড় জিততে সাহায্য করে আবার কখনও খরগোশের প্রকৌশল জিততে সাহায্য করে। যে বাস্তুতন্ত্রে পুষ্টির অভাব রয়েছে এবং বাহ্যিক কোনো হস্তক্ষেপ নেই সেখানে ধীরগতির জীব ‘কচ্ছপ’ বসবাস করতে সক্ষম। তারা তাদের সম্পদগুলো কম ব্যবহার করে, ধীরে ধীরে তাদের বৃদ্ধি হয় এবং তাদের বংশবৃদ্ধির হারও কম থাকে কিন্তু তারা সাধারণত বড়ো হয় এবং দীর্ঘকাল বেঁচে থাকতে পারে। অন্যদিকে সেই সব অঞ্চলে যেখানে খাবারের আধিক্য বেশি সেখানে খরগোশের মতো প্রাণীরা বেঁচে থাকতে সক্ষম। এই জীবগুলো আকারে ছোটো হলেও তাদের পুষ্টির চাহিদা বেশি, আয়ু কম এবং প্রজনন হারও অনেক বেশি হয়। ফ্রাঙ্কফুর্টের সেনকেনবার্গ বায়োডাইভারসিটি অ্যান্ড ক্লাইমেট রিসার্চ সেন্টারের অধ্যাপক ড. পিটার ম্যানিং-এর গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, তৃণভূমি অঞ্চলে কৃষির বিস্তার, একটি বাস্তুতন্ত্রের সমস্ত স্তরে শুধুমাত্র খরগোশের মতো প্রাণীদের জীবনধারনে সহায়তা করে। তাদের গবেষণায়, গবেষকরা জার্মানির সোয়াবিয়ান অ্যালব ও হাইনিচ অঞ্চল এবং ব্র্যান্ডেনবার্গ শোরফাইড-চোরিন বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের অঞ্চলের প্রচুর তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। তারা সমস্ত অঞ্চলের জীবজগত- মাটির অণুজীব থেকে শুরু করে গাছপালা, প্রজাপতি এবং অন্যান্য সন্ধিপদী প্রাণী, পাখি থেকে বাদুড় সমস্ত প্রাণীদের পরীক্ষা করেছেন। কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় কাজ যেমন মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য সার ব্যবহার, গাছপালা ও ঘাস ছাঁটা, জমি চষা প্রভৃতির প্রভাব নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়েছেন। তারা দেখেছেন এই সব অঞ্চলে যে সব প্রাণীর বৃদ্ধি তাড়াতাড়ি হয় তাদের মৃত্যুও তাড়াতাড়ি ঘটে। এই ক্ষেত্রে সমগ্র বাস্তুতন্ত্র ‘দ্রুত’ হয়ে উঠেছে, যেন ছুটছে। গবেষণায় দেখা যায়, জীবের ক্রিয়াকলাপের উপরও কৃষির প্রভাব পড়ে, যা চাষের গতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে “দ্রুত” হয়ে ওঠে। “ত্বরিত বাস্তুতন্ত্রে”, পচন, জৈববস্তু উৎপাদন, বা পুষ্টি চক্রের মতো প্রক্রিয়াগুলো আরও দ্রুত ঘটে। গবেষকদের মতে মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে, এই ধরনের সিস্টেম প্রাথমিকভাবে আরও বেশি কৃষি উৎপাদনশীল এবং উচ্চ ফলন প্রদান করে। তবে, এটি তাদের কার্বন সঞ্চয় করার ক্ষমতা হ্রাস করতে পারে ও দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। অন্যদিকে, প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রে, জীববৈচিত্র্য বেশি হয় এবং তারা আরও শক্তিশালী হয়। ক্রমবর্ধমান কৃষির কারণে, বিশ্বজুড়ে বাস্তুতন্ত্র ত্বরান্বিত হচ্ছে। সার ব্যবহার করে একটি বাস্তুতন্ত্রের গতি বাড়ানো তুলনামূলকভাবে সহজ-কিন্তু এটিকে মূল ‘ধীর’ অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি সময় লাগে। তাই বৈচিত্র্যের স্বার্থে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিরোধ ব্যবস্থা জরুরিভাবে প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × two =