নেপালের পার্বত্য অঞ্চলে ধান সারাবছর চাষ করা যায় না। বর্ষা শুরু হতেই তার বীজ রোপণ করে সারাবছরের জন্য সংরক্ষিত করা হয়। কিন্তু গত কয়েকবছর জলবায়ু ‘চরম’ পরিবর্তনে বিপর্যস্ত গোটা পৃথিবী। দেরিতে আসা বর্ষা, ধানের বীজ রোপণ করার কয়েক মাসের মধ্যে শীত চলে আসা এবং ফসল কাটার আগেই নষ্ট হয়ে যাওয়া ফসল-এই সংকটের সমাধান করতে স্থানীয় বীজ সংরক্ষণের পথে হাঁটল নেপাল। আজ থেকে তিন-চার দশক আগে নেপালে যে ধান রোপণ করা হত, তা হল স্থানীয় প্রজাতি। তাতে উৎপাদনের মাত্রা কম হলেও, সেই গাছের সহনশীলতা ছিল অনেক বেশি। নেপালের হিমশীতল আবহাওয়া কিংবা চরম বর্ষার মধ্যেও বেঁচে থাকত সেই গাছ। তবে লাভের জন্য পরবর্তীতে স্থানীয় কৃষকরা বেছে নেন বিদেশি ও ল্যাবরেটরি তৈরি ধানের প্রজাতিকে। মূলত ভারত, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ডের মতো দেশ থেকেই ধানের বীজ আমদানি করে থাকেন নেপালের কৃষকরা। তবে জলবায়ুর পরিবর্তনে বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে বছর তিনেক আগে এই সমস্যার সমাধান করতেই ফের সময়ের ঘড়ি ধরে পিছনের দিকে হাঁটা শুরু করেছিলেন নেপালে মারামচের স্থানীয় কৃষকরা। হ্যাঁ, স্থানীয় প্রজাতির প্রাচীন ধান প্রজাতিগুলির সংরক্ষণের মাধ্যমেই উৎপাদনের হার বজায় রাখার পথে এগোচ্ছেন তাঁরা। তৈরি হয়েছে স্থানীয় ধান প্রজাতির বীজব্যাঙ্ক। নেপথ্যে স্থানীয় কৃষক কৃষ্ণ প্রসাদ অধিকারী। তবে, খুব কিছু সহজ ছিল না এই কাজ। নেপালের প্রায় ৯০ শতাংশ কৃষকই ব্যবহার করে থাকেন আমদানিকৃত বীজ। ফলে, স্থানীয় প্রজাতির বীজের অনুসন্ধানে তাঁকে ঘুরতে হয়েছিল গোটা নেপাল। শেষ পর্যন্ত সফলও হয়েছে তাঁর এই একক প্রচেষ্টা। আজ মারামচের কৃষকদের ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে নেপালের প্রান্তিক এই বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। শুধু ধানই নয়, শসা, ভুট্টা-সহ মোট ১২টি স্থানীয় ফসলের বীজের ভাণ্ডার গড়ে তুলেছেন তিনি।