কোভিডের জন্য বয়ঃসন্ধি ত্বরান্বিত

কোভিডের জন্য বয়ঃসন্ধি ত্বরান্বিত

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

শৈশব থেকে বড়ো হয়ে ওঠার মাঝের সময় বয়ঃসন্ধিকাল। এই পর্বান্তরের সময় মানসিক, আচরণগত এবং সামাজিক বিকাশ ঘটে। এই সময়ে আত্ম-পরিচয়, আত্মবিশ্বাস এবং আত্ম-নিয়ন্ত্রণের অনুভূতি গড়ে ওঠে। কোভিড মহামারীর সময়ে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে সামাজিক মিথস্ক্রিয়া হ্রাস পায়। উদ্বেগ, বিষণ্নতা এবং মানসিক চাপ ঘিরে ধরে তাদের জীবন, বিশেষ করে মেয়েদের। প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস-এ প্রকাশিত ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে মহামারীতে কিশোর-কিশোরীদের মস্তিষ্ক খুব দ্রুত পরিণত হয়েছে। এই পরিপক্কতা মেয়েদের মধ্যে আরো প্রকট ছিল। মেয়েদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের বয়স গড়ে ৪.২ বছর বেড়ে গেছে এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে সেই একই সময়ে তা ১.৪ বছর বৃদ্ধি পেয়েছে। গবেষকদের মতে কোভিড মহামারী শুধু স্বাস্থ্য সংকট তৈরি করেনি কিশোর কিশোরীদের মনের গভীরেও পরিবর্তন এনেছে। মস্তিষ্কের পরিপক্কতা মস্তিষ্কের কলার বাইরের স্তর, সেরিব্রাল কর্টেক্সের পুরুত্ব দ্বারা পরিমাপ করা হয়। সেরিব্রাল কর্টেক্স স্বাভাবিকভাবেই বয়সের সাথে পাতলা হয়ে যায়, এমনকি কিশোর বয়সেও। দীর্ঘ সময়ের জন্য মানসিক চাপ এবং প্রতিকূলতা এই কলার পাতলা হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। ফলে নিউরোসাইকিয়াট্রিক এবং আচরণগত ব্যাধির ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। উদ্বেগ ও বিষণ্নতার মতো মনোব্যাধি প্রায়শই বয়ঃসন্ধিকালে দেখা দেয়। মেয়েদের মধ্যে এই রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের মস্তিষ্কের কলা পাতলা হওয়া ত্বরান্বিত হলেও মেয়েদের মধ্যে তা আরও বেশি স্পষ্ট। মেয়েদের মস্তিষ্কের সব অংশ জুড়েই পুরুত্ব কমে যায়। ছেলেদের মধ্যে, প্রভাব শুধুমাত্র ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সে দেখা যায়। গবেষকদের মতে ছেলেদের মস্তিষ্কের তুলনায় মেয়েদের মস্তিষ্কের উপর এই প্রভাব দুই লিঙ্গের সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার গুরুত্বের পার্থক্যের কারণে হতে পারে। কিশোরীরা প্রায়শই অন্যান্য মেয়েদের সাথে সম্পর্কের উপর বেশি নির্ভর করে, তাদের সঙ্গে মেশা, একে অপরের সাথে কথা বলা এবং অনুভূতি ভাগ করার ক্ষমতাকে অগ্রাধিকার দেয়। ছেলেরা শারীরিক ক্রিয়াকলাপে বেশি বিশ্বাস করে। সারা বিশ্ব যখন কোভিড মহামারীতে ঘর বন্দি তখন মেয়েরা তাদের মনে জমে থেকে কথা, মনের চাপ একে অপরের সাথে ভাগ করে নিতে পারেনি। তারা ঘরে আটকে থেকেছে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো। এর ফলে তাদের মস্তিষ্ক অনেক বেশি প্রভাবিত হয়েছে। সেরিব্রাল কর্টেক্স আবার ঘন হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই। তবে স্বাভাবিক সামাজিক মিথস্ক্রিয়া এবং আদানপ্রদানের ফলে প্রক্রিয়াটির গতি হ্রাস পেতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকরা।