
গ্যাস আর তরল দুই-ই হল ফ্লুইড। আমাদের গ্রহকে ঘিরে-থাকা বায়ুই হোক আর আমাদের ধমনীর মধ্যে বয়ে-চলা রক্তই হোক, সকলেরই আছে এই সান্দ্রতা ধর্ম। গ্যাস কিংবা তরল কোনো পদার্থর সংস্পর্শে এলে কেমন আচরণ করবে তা নির্ধারণ করে দেয় এই সান্দ্রতা ধর্ম। সান্দ্রতা বেশি হলে ফ্লুইড শান্তভাবে বইবে। সেই শান্ত প্রবাহকে বলা হয় ল্যামিনার প্রবাহ। সান্দ্রতা কমলে ফ্লুইডটা এই শান্ত ল্যামিনার প্রবাহ থেকে অশান্ত (টার্বুলেন্ট) প্রবাহে রূপান্তরিত হবে। কোন প্রবাহর মাত্রা কতটা তীব্র তা সূচিত হয় ‘রেনল্ড সংখ্যা’ দিয়ে। গতিশীল সাদৃশ্যের রেনল্ড সংখ্যা আমাদের জানায় যে দুটি ফ্লুইড যদি ভিন্ন দৈর্ঘ্য-মান অথচ সদৃশ কাঠামোর চারপাশ দিয়ে বইতে থাকে এবং তাদের রেনল্ড সংখ্যা যদি একই হয়, তাহলে তারা হবে জল-গতিময়তার দিক থেকে সমান।
কিন্তু এই রেনল্ড সাদৃশ্যর ব্যাপারটা কোয়ান্টাম সুপারফ্লুইডের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, কারণ কোয়ান্টাম সুপারফ্লুইডের সান্দ্রতা থাকে না। অন্তত সেরকমটাই এতদিন বিশ্বাস করতেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু সম্প্রতি জাপানের ওসাকা মেট্রোপলিটান বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত নাম্বু ইয়োচিরো গবেষণা সংস্থার ডঃ হিরোমিৎসু তাকেউচি সুপারফ্লুইডের কোয়ান্টাম সান্দ্রতা পরীক্ষা করবার একটা সম্ভাব্য তাত্ত্বিক পথ দেখিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কোয়ান্টাম সান্দ্রতা সুপারফ্লুইড তত্ত্বের সাধারণ জ্ঞানকে উলটে দিয়েছে। সুপারফ্লুইডের ক্ষেত্রে সদৃশতা প্রতিষ্ঠা করাটা সাবেকি জল-গতিবিদ্যা আর কোয়ান্টাম জলগতিবিদ্যাকে মেলানোর পথে এক আবশ্যিক পদক্ষেপ।
কিন্তু কোয়ান্টাম সুপারফ্লুইডের অশান্ত দশার অস্তিত্ব একটা কোয়ান্টাম হতভম্বতার সৃষ্টি করেছে: ফ্লুইডের অশান্ত দশার অঙ্গ হল ছড়িয়ে পড়ে ক্ষীণ হওয়া (ডিসিপেশন) ; আর সান্দ্রতা না থাকলে ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটে না। কাজেই কোয়ান্টাম অশান্ত দশা থাকতে হলে সুপারফ্লুইডের ছড়িয়ে পড়ার এই ধর্ম তার থাকতেই হবে আর সেটা রেনল্ড সংখ্যাও মেনে চলবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ঠিক কোন পথ ধরে পরীক্ষা করলে এ সমস্যার সমাধান করা যাবে? সেটা এখনো অজানা। ডঃ তাকেউচির তত্ত্ব বলছে, এইসব বৈশিষ্ট্যগুলোকে পরীক্ষা করতে গেলে বিশ্লেষণ করে দেখা দরকার, একটা কঠিন গোলক সুপারফ্লুইডের মধ্যে পড়ার সময় কী হয়। পড়বার সময় গোলকটি ফ্লুইডের কাছ থেকে যে-রোধের সম্মুখীন হয়, তার সঙ্গে গোলকটির পতনের প্রান্তিক গতির সম্মিলন ঘটিয়ে গবেষকরা রেনল্ড সংখ্যার একটা প্রতিমান তৈরি করে নিতে পারবেন। কার্যত সেটাই সান্দ্রতা, তার নাম কোয়ান্টাম সান্দ্রতা। এ-কে পরিমাপ করা যায়।
এই গবেষণার মূল অভিমুখ হল একটা তাত্ত্বিক সমস্যা। সেটা হল, কী করে সুপারফ্লুইডের অশান্ত দশা অনুধাবন করা যায়। এ তত্ত্ব থেকে দেখা গেল, একটা বস্তু সুপারফ্লুইডের মধ্যে পড়বার সময় তার প্রান্তিক গতি কত সেইটা পরিমাপ করে সুপারফ্লুইডের রেনল্ডস সাদৃশ্য যাচাই করা যায়। এটা যাচাই করতে পারলে তা থেকে এই ধারণার আভাস মিলবে যে পরম শূন্য তাপমাত্রাতেও বিশুদ্ধ সুপারফ্লুইডের কোয়ান্টাম সান্দ্রতা থাকে। ডঃ তাকেউচি অধীর আগ্রহে বাস্তব পরীক্ষানিরীক্ষা মারফত এ তত্ত্বের যাচাইকরণের জন্য অপেক্ষা করছেন। তাঁর এই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল প্রকাশিত হয়েছিল ফিজিক্যাল রিভিউ-বি পত্রিকায় ১১ জানুয়ারি, ২০২৪।
সূত্র: Physical Review B., 11 January 2024
DOI: 10.1103/PhysRevB.109.L020502