ক্যান্সার প্রতিরোধী গুণযুক্ত উদ্ভিদ

ক্যান্সার প্রতিরোধী গুণযুক্ত উদ্ভিদ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৬ মে, ২০২৫

নাইজেরিয়ায় ক্যান্সারের প্রভাব ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বাড়ছে। সচরাচর স্তন, জরায়ু, প্রস্টেট, এবং লিভার ক্যান্সার বেশি দেখা যায় , যা জনস্বাস্থ্যের জন্য যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ।কেমোথেরাপি ও রেডিয়োথেরাপির মতো প্রচলিত চিকিৎসা সত্ত্বেও, নিরাপদ ও অধিক কার্যকর চিকিৎসার বিকল্পের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু দেশীয় উদ্ভিদ জৈবিক ভাবে সক্রিয় যৌগ তৈরি করে শারীরিক প্রক্রিয়া তথা রোগ প্রতিরোধ , শরীরের কার্যকারিতা বৃদ্ধ্বিতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। নাইজেরিয়ার দেশীয় উদ্ভিদগুলি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আশাব্যঞ্জক সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। কোষের মৃত্যু ও প্রদাহকে নিশানা করে এবং প্রচলিত চিকিৎসার পাশাপাশি তা সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
একটি নতুন পর্যালোচনা এই উদ্ভিদগুলির ক্যান্সার প্রতিরোধী কার্যকারিতা এবং প্রচলিত চিকিৎসার পাশাপাশি সহায়ক থেরাপি হিসাবে তাদের সম্ভাব্য ভূমিকা পরীক্ষা করেছে।উদ্ভিদগুলির মধ্যে ফ্ল্যাভোনয়েড, অ্যালকালয়েড, টারপেনয়েড, এবং ফেনোলিক অ্যাসিডের মতো নানা জীবক্রিয়াশীল যৌগ রয়েছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। এগুলি হল –
স্পন্ডিয়াস মম্বিন : এই উদ্ভিদটি ক্যারোটিনয়েড এবং ফ্ল্যাভোনয়েড, বিশেষত কোয়ারসেটিনে সমৃদ্ধ, যা অ্যাপোপটোসিস (কোষের প্রাকৃতিক মৃত্যুর প্রক্রিয়া) বাড়ায়, কোষ বিভাজন কমায়,অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস করে এবং এর প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
জ্যানথোসোমা স্যাগিটিফোলিয়ামঃ লিউকেমিয়া কোষের বিরুদ্ধে অ্যান্টিক্যান্সার কার্যকারিতা প্রদর্শনকারী এই উদ্ভিদটি অ্যাপোপটোসিস বাড়ায় , কোষচক্র আটকায় এবং অ্যাঞ্জিওজেনেসিস (নতুন রক্তনালী গঠনের প্রক্রিয়া) বাধা দেয়।
ইলায়িস গুইনেনসিস (পাম অয়েল): এতে থাকা টোকোট্রিয়েনল যৌগ অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে এবং অ্যাপোপটোসিসকে বাড়িয়ে ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বিশেষত স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এটি কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।
ইরভিনগিয়া গ্যাবোনেনসিস (আফ্রিকান আম গাছ ): এই উদ্ভিদ ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ট্যানিনে সমৃদ্ধ, যাতে আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য ,যা অ্যাপোপটোসিসকে উদ্দীপিত এবং ক্যান্সার সম্পর্কিত বিপাকীয় পথ নিয়ন্ত্রণ করে।
অ্যালিয়াম সেপা (পেঁয়াজ):এতে থাকে অর্গানোসালফার যৌগ, ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ফেনোলিক অ্যাসিড যা,অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়, কোষ বিভাজন রোধ করে এবং অ্যাপোপটোসিস বাড়ায়।
ব্লাইগিয়া সাপিডা (আকি ফল): এই উদ্ভিদের বিভিন্ন জৈব-সক্রিয় যৌগ স্তন ক্যান্সারের ERK5 সাংকেতিক পথ বাধাপ্রাপ্ত করে ডিএনএ-র ক্ষতি প্রতিরোধ করে।
ডায়োস্কোরিয়া ডুমেটোরাম (বন আলু):এতে ডাইওজেনিন নামক যৌগ রয়েছে, যা কোষ বিভাজন কমায়, অ্যাপোপটোসিস বাড়ায়।
পসিডিয়াম গুয়াজাভা (পেয়ারা):পেয়ারা পাতা ট্যানিন, ফ্ল্যাভোনয়েড, এবং ফেনোলিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ, যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
টালিনাম ট্রাইয়াঙ্গুলারি (জলশাক):এতে রয়েছে কোয়ারসেটিন, যা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য এবং অ্যাপোপটোসিস বাড়ায়।
এই উদ্ভিদগুলির ভেষজগুণ পরিচয় বোঝার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন। মাটি ও পরিবেশগত অবস্থার কারণে এদের উদ্ভিজ্জরাসায়নিক গঠনে পরিবর্তন ঘটতে পারে, যা তাদের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে। এছাড়া, মানব শরীরের উপর তাদের নিরাপদ কার্যকারিতা নির্ধারণের জন্য রোগভিত্তিক পরীক্ষণ জরুরি। এই স্থানীয় উদ্ভিদগুলি প্রচলিত চিকিৎসার পাশাপাশি পরিপূরক চিকিৎসা হিসাবে ক্যান্সার প্রতিরোধে এদের কার্যকারিতা বাড়াতে পারে, বিশেষত যেখানে এই রোগটির চিকিৎসাগত সুবিধা সীমিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

8 − five =