
কল্পনা করুন, একজন কিশোর ফুটবলার হঠাৎ এমন গতিতে দৌড় দিচ্ছে, যেন জেট বিমান রানওয়ে ছাড়ছে! এই দৃশ্যই বদলে দিতে পারে ম্যাচের মোড়। গড়পড়তা স্প্রিন্টকে পরিণত করতে পারে ম্যাচ-ছিনিয়ে আনা পটুতায়। এ এক অভিনব গবেষণার ফল। ইউনিভার্সিটি অফ এসেক্স-এর ক্রীড়া গবেষক ড. জেসন মোরান, টটেনহ্যাম হটস্পারের এলিট অ্যাকাডেমির ১৪-১৫ বছরের খেলোয়াড়দের নিয়ে চালিয়েছেন পরীক্ষামূলক এক গবেষণা। দেখা গেছে, নিজের শরীরের কৌশল নিয়ে চিন্তা না করে বরং চারপাশের পরিবেশ নিয়ে কল্পনা করলে, ফুটবলারদের গতি বেড়ে যায় গড়ে ৩ শতাংশ পর্যন্ত। যা অর্জন করতে সাধারণত সপ্তাহের পর সপ্তাহ কসরত করতে হয়। “মাঠের অদৃশ্য সীমারেখা ঠেলে ফেলে দাও, ফেরারির মতো গতি নাও, জেটের মতো আকাশে উড়ে যাও”। এমন চিত্র-চিন্তা ভিত্তিক নির্দেশনাই কিশোর ফুটবলারদের দৌড়ে যেন অতিমানবিক ছোঁয়া এনে দেয়। মোরান ব্যাখ্যা করেন, “যখন আমরা খেলোয়াড়দের শরীর নয়, বরং চারপাশকে লক্ষ্য করতে বলি, তখন তাদের গতির প্রবাহগুণ বেড়ে যায়। এর পিছনে আছে মনস্তাত্ত্বিক কৌশল। সাধারণ কোচিঙের কার্যকরী নির্দেশনাগুলি শিশুদের জন্য জটিল মনে হতে পারে। কিন্তু যদি বলা হয়, “বিমানের মতো ছোটো” বা “ফেরারির মতো গতি নাও”-তখন শরীর নিজে থেকেই ঠিক ভঙ্গিমা নিয়ে নেয় । এতে কমে যায় মানসিক বাধা, বাড়ে কার্যক্ষমতা। প্রশিক্ষণে উপমা যেন এক জাদুকৌশল। মোরান বলেন, “এই গবেষণা শুধুই পেশাদার কিশোরদের নিয়ে নয়। স্কুলে বা যেকোনো জায়গায়, যে কোনো কোচ বা অভিভাবক এই কৌশল ব্যবহার করতে পারেন।” বলুন—“তুমি এখন বাতাস কেটে দৌড়াচ্ছো”, “তুমি বজ্রের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ছো”। এই কথাগুলি শুধু শব্দ নয় বরং গতি বাড়ানোর মানসিক উদ্দীপক। খেলোয়াড়ের মস্তিষ্কে যখন একটা স্পষ্ট ছবি ফুটে ওঠে, তখন শরীর আর টাল খায় না, সে শুধু ছুটে চলে। শব্দের এমন জাদুকরী ব্যবহারে ফুটবলের মাঠ শুধু খেলার জায়গা নয়, হয়ে উঠতে পারে ভাষা ও মস্তিষ্কের সম্মিলিত পরীক্ষাগার। তাই মনে রাখুন—গতির পেছনে শুধু পা নয়, কাজ করে ‘কথা’। আর সঠিক কথার বেগে খেলোয়াড় নিজেই হয়ে ওঠে এক বিমান সমান। কিংবদন্তি বাঙালি ফুটবলার ও কোচ প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এক সময় ফুটবলারদের উদ্দীপিত করবার জন্য ‘ভোকাল টনিক ‘ ব্যবহার করতেন। এ যেন তারই বৈজ্ঞানিক সংস্করণ।
আমাদের প্রবাদপ্রতিম ফুটবলার পি কে বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ।