গন্ধের জিনতত্ত্ব

গন্ধের জিনতত্ত্ব

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৬ আগষ্ট, ২০২৫

লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক এপিডেমিওলজিস্ট মার্কাস শোলজের নেতৃত্বে এক গবেষকদল গন্ধ ভালো-লাগা মন্দ-লাগা নিয়ে গবেষণা করেছেন। জার্মানি, ইতালি ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ২১,০০০ মানুষের ওপর পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা যায়, আমাদের ডিএনএ নির্ধারণ করে আমরা কোন কোন গন্ধ চিনতে পারি এবং সেগুলোর প্রতিক্রিয়া কতটা তীব্র হয়। তাঁরা এমন ১০টি জিন-অঞ্চল চিহ্নিত করেছেন যা নির্দিষ্ট গন্ধ চেনার ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কিত। এর মধ্যে সাতটিই নতুন আবিষ্কার। এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের ১২টি গন্ধ শনাক্ত করতে বলা হয়। এরপর তাদের সঠিক উত্তরগুলো মিলিয়ে দেখা হয় লক্ষাধিক একক-নিউক্লিওটাইড পলিমরফিজম-এর সঙ্গে। প্রতিটি ব্যক্তির জন্য একটি ব্যক্তিগত গন্ধ স্কোর তৈরি করা হয়।
দুটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল পাওয়া গেছে গন্ধগ্রাহী জিন সমাহার-এর মধ্যে। অন্যগুলো এমন কিছু উৎসেচককে নির্দেশ করে যা গন্ধের রাসায়নিক সংকেতকে বৈদ্যুতিক সংকেতে রূপান্তরিত করে। একটি নির্দিষ্ট জিনগত পরিবর্তন একজনকে মাছের গন্ধ চেনার ক্ষেত্রে চারগুণ বেশি দক্ষ করে তোলে। এক-তৃতীয়াংশ ইউরোপীয়দের মধ্যে এটি দেখা যায়।

আবার, দেখা গেছে বিশ্বের সর্বত্র নারীরা পুরুষদের তুলনায় গন্ধ শনাক্তকরণে বেশি দক্ষ। এর পেছনেও আছে হরমোন ও জিনের মিলিত প্রভাব। গবেষণায় তিনটি জিনোমিক অঞ্চল পাওয়া গেছে যেগুলির প্রভাব নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে ভিন্ন। যেমন, একটি প্রকারভেদ (জিনের বিকল্প) নারীদের কমলার গন্ধ চেনার সম্ভাবনা তিনগুণ বাড়ায়, অথচ পুরুষদের মধ্যে কোনো প্রভাব ফেলে না। জানা গেছে ইস্ট্রোজেনের আধিক্য গন্ধের প্রতি সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং টেস্টোস্টেরন তা কমিয়ে দেয়। একারণেই গর্ভাবস্থা বা মাসিকচক্রের সময় নারীদের ঘ্রাণ পরিবর্তনের ঘটনা ঘটে থাকে।
প্রতিটি গন্ধের জন্য ডিএনএ-র আলাদা অংশ কাজ করে। যেমন, দারুচিনির গন্ধ শনাক্ত করতে সহায়তা করে একটি নির্দিষ্ট জিন। আবার, আনারসের জন্য দুটি আলাদা জেনেটিক অঞ্চল সক্রিয়। একটি গন্ধ বাদ দিলে তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জিনগত সংকেতও মিলিয়ে যায়। এটি প্রমাণ করে প্রতিটি প্রকারভেদের প্রভাব নির্দিষ্ট এবং লক্ষ্যভিত্তিক। যেমন, আনারসের গন্ধ শনাক্তকারী জিন কমলালেবু শনাক্ত করতে সাহায্য করে না।
ঘ্রাণশক্তি হারানো অ্যালঝেইমারের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর একটি। যাদের আলঝেইমারের ঝুঁকি বেশি তাদের গন্ধ চেনার স্কোর কম। তবে ঘ্রাণশক্তি কম মানেই যে অ্যালঝেইমার তা নয়। এটি ঘ্রাণ ও স্মৃতির মধ্যবর্তী সংযোগে কোষের সুস্থতা কীভাবে প্রভাব ফেলে তা বোঝাতে সাহায্য করে।
বায়োইনফরম্যাটিক স্ক্যানে দেখা গেছে নারী-পুরুষের জিনের ভিন্ন ভিন্ন প্রকারভেদের পাশে ৪০টির বেশি অ্যান্ড্রোজেন-মোটিফ আছে, কিন্তু ইস্ট্রোজেন-মোটিফ অনেক কম। তবে জেনোমিক স্তরে টেস্টোস্টেরন বা সংশ্লিষ্ট হরমোনের সরাসরি প্রভাব পাওয়া যায়নি। গবেষণাগারগুলি এখন CRISPR প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘ্রাণ স্নায়ুকোষে সংশ্লিষ্ট মোটিফ পরিবর্তন করে দেখবে হরমোন কিভাবে জিনের কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলে।
গন্ধ-সম্পর্কিত জিনের ব্যবহার এখনোও চিকিৎসাক্ষেত্রে হয় নি, তবে শীঘ্রই কোন পরিবারে কি ধরনের গন্ধ শনাক্তকারী জিন রয়েছে, ডিএনএ রিপোর্টে তা অন্তর্ভুক্ত হতে চলেছে। সেই তথ্য ব্যবহার করে পারফিউম কোম্পানিগুলো আঞ্চলিক জিনগত প্রোফাইল অনুযায়ী পণ্য তৈরি করতে পারবে।

সূত্র: Genome-wide association meta-analysis of human olfactory identification discovers sex-specific and sex-differential genetic variants by Franz Forster, et.al ; Nature Communications (01 July,2025).

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × three =