নাসা, ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি এবং ইতালিয়ান স্পেস এজেন্সির সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টায়, ১৯৯৭ সালে ক্যাসিনি মিশন চালু হয়েছিল যা প্রায় ২০ বছর ধরে শনি, তার বলয় ও চাঁদগুলো অন্বেষণ করছিল। ক্যাসিনি প্রোব মিশন থেকে ডেটা ব্যবহার করে, এনএসএম এর আর্থ অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক সায়েন্সেস বিভাগের ডক্টরাল ছাত্র জিনিউ ওয়াং শনি গ্রহে উল্লেখযোগ্য শক্তির ভারসাম্যহীনতা খুঁজে পেয়েছেন। হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা শনি গ্রহের এই বিশাল শক্তির ভারসাম্যহীনতা প্রকাশ করেছেন, যা গবেষকদের মতে গ্রহ বিজ্ঞান এবং বিবর্তনের ওপর নতুন আলোকপাত করেছে এবং সৌরজগতের গ্যাসীয় দৈত্য গ্রহদের জন্য বিদ্যমান জলবায়ু মডেলকে চ্যালেঞ্জ করছে। এই ফলাফল নেচার কমিউনিকেশন প্রকাশিত হয়েছে। ওয়াং বলেছেন, প্রতিটি গ্রহ সূর্যের সৌর বিকিরণ থেকে শক্তি পায় আর তাপীয় বিকিরণ নির্গত করে শক্তি হারায়। কিন্তু শনি গ্রহের, অন্যান্য গ্যাস দৈত্যের মতো, গভীর আভ্যন্তরীণ তাপের আকারে আরেকটি শক্তি রয়েছে যা এর তাপীয় কাঠামো এবং জলবায়ুকে প্রভাবিত করে।
এই ভারসাম্যহীনতার কারণ শনির বৃহৎ উপবৃত্তাকার কক্ষপথের বিকেন্দ্রিকতা, যা অপসূর (সূর্য থেকে গ্রহ যখন সবচেয়ে দূরে) ও অনুসূর (গ্রহ যখন সূর্যের নিকটতম) দশায় প্রায় ২০% পরিবর্তিত হয়। এর ফলে শোষিত সৌরশক্তিতে বিশাল ঋতু পরিবর্তন উপলব্ধি করা যায়। পৃথিবীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনা, প্রথমত পৃথিবীর কক্ষপথ তুলনামূলকভাবে খুব ছোটো, দ্বিতীয়ত পৃথিবীর একটা পরিমাপযোগ্য শক্তি বাজেট আছে, যা প্রাথমিকভাবে শোষিত সৌর শক্তি এবং নির্গত তাপ শক্তি দ্বারা নির্ধারিত হয় আর পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ তাপ নগণ্য, তাছাড়া পৃথিবীতে ঋতু মাত্র কয়েক মাস স্থায়ী হয়, যেখানে শনি গ্রহে ঋতুগুলো কয়েক বছর দীর্ঘ হয়ে থাকে। গবেষণা বলছে শনির ভারসাম্যহীন শক্তির জন্য মারাত্মক আকারে ঝড় হয়ে থাকে, যা এই গ্রহের বায়ুমণ্ডলের আবহাওয়ার প্রভাবশালী উপাদান। গবেষকরা পরবর্তী দশকে ইউরেনাসে এরকম মিশন করার চেষ্টা করবেন। তাদের ধারণা ইউরেনাসেও তারা আরও বেশি শক্তির ভারসাম্যহীনতা দেখবেন, তার কক্ষপথের বিকেন্দ্রিকতা ও তির্যকতার কারণে।
ছবি ঋণ – হস্টন বিশ্ববিদ্যালয়