গভীর সমুদ্র অভিযান ও নতুন প্রাণী আবিষ্কার

গভীর সমুদ্র অভিযান ও নতুন প্রাণী আবিষ্কার

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১১ জুন, ২০২৪

মার্চ মাসে, পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে মেক্সিকো এবং হাওয়াইয়ের মধ্যে ক্লারিওন ক্লিপারটন জোনে ৪৫ দিনের এক গবেষণা অভিযান শেষ হয়েছে। অধ্যয়ন করা এই অতল সমুদ্র ৩৫০০ থেকে ৫৫০০ মিটার গভীর। এই অতলস্পর্শী সমুদ্র অভিযানে বেশ কিছু আকর্ষণীয় প্রাণী আবিষ্কৃত হয়েছে, স্বচ্ছ সামুদ্রিক শসা, বাটির মতো স্পঞ্জ এবং গোলাপী সামুদ্রিক শূকর। ব্রিটিশ গবেষণা জাহাজ জেমস কুকের বিজ্ঞানীদের মধ্যে টমাস ডাহলগ্রেন, গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় এবং এন ও আর সি ই গবেষণা ইনস্টিটিউটের সামুদ্রিক পরিবেশবিদ বলেছেন, এই অঞ্চলগুলোতে এতদিন সবচেয়ে কম অন্বেষণ করা হয়েছে, তাই এখানে বসবাসকারী প্রতি দশটা প্রাণীর মধ্যে হয়তো একটা প্রাণীর বৈজ্ঞানিক বর্ণনা পাওয়া যায়।
গবেষকরা বলেন এখানকার গভীর-সমুদ্রে বসবাসকারী প্রাণীরা খুব কম পুষ্টির জীবন যাপনের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি উৎপাদনশীল এলাকা থেকে জৈব ধ্বংসাবশেষ যা সামুদ্রিক তুষার নামে পরিচিত, তা সমুদ্রে এসে পড়ে, এই খাবারের ওপর এখানকার বেশিরভাগ প্রাণী নির্ভরশীল। এই প্রাণীরা ফিল্টার ফিডার, অর্থাৎ জলে ভাসমান ছোটো ছোটো খাবার, পোকা সব গলাধকরণ করে, আর যেগুলো প্রয়োজন নেই সেগুলো নির্গত করে দেয়, এই ধরনের এক খাদক হল স্পঞ্জ। আর দেখা যায় পলল ফিডার, যারা সমুদ্রতলে পড়ে থাকা জৈবিক বস্তু গ্রহণ করে, যেমন সামুদ্রিক শসা। খাদ্যের অভাব থাকলেও এই অঞ্চলে প্রজাতির সমৃদ্ধি আশ্চর্যজনকভাবে বেশি। এই অঞ্চলের প্রাণীদের মধ্যে বিশেষ অভিযোজন দেখা যায়। সামুদ্রিক স্পঞ্জের আয়ুষ্কাল পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীর তুলনায় বেশি, তা ১৫০০০ বছরব্যাপীও হতে পারে। আমপেরিমা গোত্রের সামুদ্রিক শসার প্রজাতি পুষ্টি সমৃদ্ধ পলির সন্ধানে সমুদ্রতল জুড়ে তার টিউব ফুট দিয়ে খুব ধীরে ধীরে চলে। এই সামুদ্রিক শসাগুলি এই অভিযানে পাওয়া বৃহত্তম প্রাণী, তাদের দেহ এত স্বচ্ছ, যে তাদের খাদ্যনালী, খাদ্য গ্রহণ দেখা যায়। পলল অনুসন্ধানে তারা সমুদ্রের তলের ভ্যাকুয়াম ক্লিনার হিসাবে কাজ করে।
এই অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল এলাকার জীববৈচিত্র্যের মানচিত্র তৈরি করা, যেখানে সৌর প্যানেল, বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি এবং অন্যান্য সবুজ প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত বিরল ধাতুর জন্য গভীর সমুদ্র খননের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই ধাতুগুলো নিষ্কাশনের জন্য বেশ কয়েকটি দেশ এবং কোম্পানি অনুমোদনের অপেক্ষা করছে। বিজ্ঞানীরা খনন বাস্তুতন্ত্রকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে সে সম্পর্কে জানতে, বিদ্যমান প্রজাতির নিবন্ধ তৈরি করতে, বাস্তুতন্ত্র কীভাবে সংগঠিত হয় তা খুঁজতে এই অভিযান চালিয়েছিলেন।