গাছে নামা ওঠার জন্য ব্রেক হিসেবে বনমানুষ কাঁধ ও কনুইয়ের ব্যবহার শুরু করেছিল

গাছে নামা ওঠার জন্য ব্রেক হিসেবে বনমানুষ কাঁধ ও কনুইয়ের ব্যবহার শুরু করেছিল

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

আদিম মানুষ যখন বন জঙ্গল ছেড়ে ঘাসে ভরা প্রান্তরে থাকতে শুরু করল তাদের কাঁধ ও কনুই ঘোরানোর ক্ষমতার সাহায্যে তারা খাদ্য সংগ্রহ করত, শিকার করত, নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য অস্ত্র ব্যবহার করত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডার্টমাউথ কলেজের গবেষকদের মতে মানুষ প্রথম গাছ থেকে ধীরে ধীরে নীচে নামার জন্য তাদের কাঁধ ও কনুই ব্যবহার করেছিল যাতে তারা মাধ্যাকর্ষণের টানে খুব জোরে নীচে পড়ে মৃত্যু এড়াতে পারে। গবেষকরা কিছু শিম্পাঞ্জি এবং ম্যাঙ্গাবেজ নামে কিছু ছোটো বানরের খেলাধূলার প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করেন এবং পরিসংখ্যানগত সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে ভিডিও এবং ছবির তুলনা করে দেখেন যে প্রাণীরা যথাসম্ভব কাঁধ এবং কনুইকে শরীরের দিকে বাঁকিয়ে গাছে ওঠে। কিন্তু শিম্পাঞ্জিরা গাছ থেকে নীচে নামার সময় তাদের হাত মাথার ওপরে প্রসারিত করে ডাল ধরে রাখে ঠিক যেমন কোনো ব্যক্তি মই বেয়ে নীচে নামার সময় তার হাত মাথার ওপরে মই ধরার জন্য তুলে রাখে। এর কারণ হল দুজেনেরই শরীরের ভর বা ওজন তাদের নীচের দিকে টেনে নিয়ে যায়। রয়্যাল সোসাইটি ওপেন সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে যে মানুষের পূর্বসূরি বনমানুষের থেকেই অস্ট্রালোপিথেকাসের মতো আদিম মানুষ নমনীয় কাঁধ এবং কনুই উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে যার সাহায্যে তারা রাতের আঁধারে নিরাপত্তার জন্য গাছে উঠত এবং দিনের আলোতে অক্ষত অবস্থায় গাছ থেকে নেমে আসত। মানুষ যখন নিশাচর শিকারীদের থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য আগুন ব্যবহার করতে শিখল তখন তাদের কাঁধ আরও চওড়া হল এবং তারা ৯০-ডিগ্রি কোণে হাত ঘুরিয়ে বর্শা ছুঁড়তে শিখল। গবেষকরা আরও দেখেছেন যে মানুষের মতোই, শিম্পাঞ্জিরও কাঁধে একটি অগভীর বল-ও-সকেট জয়েন্ট রয়েছে যার সাহায্যে তারা হাত ঘোরাতে পারত। যদিও এই জয়েন্ট খুব সহজেই স্থানচ্যুত হয়ে যেত। তারা মানুষের মতো হাত প্রসারিত করতে পারত। ম্যাঙ্গাবেজ এবং অন্যান্য বানরের গঠন অনেকটা চতুষ্পদী প্রাণী যেমন বিড়াল এবং কুকুরের মতো। তাদের গভীর নাশপাতি আকৃতির কাঁধের সকেট এবং কনুইয়ে একটি প্রসারিত ওলেক্রানন প্রসেস রয়েছে যা জয়েন্টটিকে L অক্ষরের মতো করে তোলে। যদিও এই জয়েন্টগুলো অনেক স্থিতিশীল, তবে তাদের নমনীয়তা এবং গতিবিধির পরিসর সীমিত। গবেষক, লুক ফ্যানিনের মতে বনমানুষ এবং প্রথম পর্যায়ের মানুষের বিবর্তনে “ডাউনক্লাইম্বিং” বা নীচে নামার তাত্পর্য গুরুত্বপূর্ণ। এই গবেষণায় বানর এবং বনমানুষের মধ্যে দৈহিক গঠনের পার্থক্যকে অপসারণ করার ক্ষেত্রে ডাউনক্লাইম্বিং-কে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে যা অবশেষে মানুষের মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। কুড়ি মিলিয়ন বছর আগে প্রথম বনমানুষ বনের মধ্যে বিবর্তিত হয়েছিল যখন তারা তাদের খাদ্য সংগ্রহ করতে গাছে উঠত, তারপরে নীচে নেমে আবার অন্য গাছে চড়ত। গাছ থেকে নীচে নামতে অনেক নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। বড়ো আকৃতির বনমানুষের পড়ে যাওয়ার ভয় ছিল আর পড়ে গেলে তারা ভালোরকম চোট পেত বা মারাও যেত। ন্যাচেরাল সিলেকশন বা প্রকৃতি সেই দৈহিক গঠনকে তুলে ধরেছে যা তাদের নিরাপদে নীচে নামতে সাহায্য করেছে।