গাছ থেকে বায়ুদূষণ?

গাছ থেকে বায়ুদূষণ?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩ জুলাই, ২০২৪
বায়ুদূষণ

ক্যালিফোর্নিয়ায় বাতাসে অত্যন্ত ক্ষুদ্র বায়ুবাহিত কণা এবং স্থল-স্তরের ওজোন ভাসছে, যা বাতাসে দূষণ ঘটাচ্ছে। এখানকার পরিবেশগত নীতি এবং উন্নত প্রযুক্তির ট্র্যাফিক নিষ্কাশন ব্যবস্থার জন্য যানবাহন থেকে নির্গমন ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছে। তাহলে বাতাসের দূষণের জন্য দায়ী কে? জেনে আশ্চর্য হবেন, এই দূষণের উৎস হল সবুজ গাছপালা, যা শহরের রাস্তার পাশে পাশে রয়েছে। মার্কিন গবেষকদের দল ২০২১ সালের জুন মাসে ন’বার লস অ্যাঞ্জেলেসের আকাশে উদ্বায়ী জৈব যৌগগুলোর (VOCs) ওঠানামার ঘনত্ব মাপতে গিয়েছিলেন। এই উদ্বায়ী দূষিত জৈব যৌগগুলো উদ্ভিদ থেকে সৃষ্টি হতে পারে। পূর্বে জ্ঞাত উৎসের ওপর ভিত্তি করে নির্গমন মাপা হত বা নির্গমনের গতিবিধি মডেল করা হত। সাম্প্রতিক বায়ুবাহিত পদ্ধতি সেকেন্ডে বহুবার বায়ুবাহিত দূষণকে সরাসরি পরিমাপ করতে পারে। এর জন্য অন-বোর্ড ভর স্পেকট্রোমিটার ব্যবহার করা হয়েছিল, যা বিস্তারিতভাবে ৪০০ টারও বেশি ধরনের নির্গমন বর্ণনা করেছে। গবেষকরা উদ্বায়ী জৈব যৌগের উদ্ভিজ্জ উত্স খুঁজে পেয়েছেন, যেমন আইসোপ্রিন, মনোটারপিনস এবং সেসকুইটারপিনসের মতো যৌগ। এগুলো গ্রীষ্মের শুরুতে সেকেন্ডারি জৈব অ্যারোসলের প্রায় ৬০ শতাংশের সম্ভাব্য গঠনে অবদান রাখে। গরম আবহাওয়া, খরার সাথে এই উদ্ভিজ্জ নির্গমন বৃদ্ধি পেয়ে অবস্থা আরও খারাপ হবেবলে গবেষকরা জানিয়েছেন।
পরিবহণ এবং শিল্পে বিষাক্ত নির্গমন কমানোর প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, বায়ু দূষণ থেকে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সমস্যা রয়ে গেছে। মাত্র কয়েক মাইক্রোমিটারের সূক্ষ্ম কঠিন কণা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়, জন্মের সময় কম ওজন হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ওজোনযুক্ত বাতাসে শ্বাস নিলে শ্বাসকষ্টের অসুস্থতা হয় বা মৃত্যুহার বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে। সূক্ষ কণা ও ওজোনের গঠনের জন্য দায়ী হল উদ্বায়ী জৈব যৌগ। বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিক আমাদের স্বাস্থ্যকে সরাসরি প্রভাবিত করে এবং সূর্যের আলো ও বায়ুমণ্ডলে প্রতিক্রিয়া করে ওজোনের মতো গ্যাস ও দূষণকারী কণা তৈরি করে।
শহুরে জনসংখ্যার ক্ষেত্রে প্রতি বছর আনুমানিক ৪.২ মিলিয়ন অকাল মৃত্যুর জন্য বায়ু দূষণকে দায়ী করা যেতে পারে। এর পেছনে নানা পণ্যদ্রব্য, রাসায়নিক, কীটনাশক এসবই বড়ো মাত্রায় অবদান রাখে। সায়েন্স জার্নালে গবেষকরা জানিয়েছেন, সবুজ স্থান যা পরিচ্ছন্ন জীবনযাপনের প্রতীক, সেখানে গাছপালা টারপিনয়েডের আকারে যৌগ তৈরি করে, বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে তা উদ্বায়ী জৈব যৌগের প্রবাহিত ভরের প্রায় ১৬ শতাংশ। মনোটারপিন এবং সেসকুইটারপিন নির্গমন সাধারণত তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পায়, যেখানে আইসোপ্রিন নির্গমন তাপমাত্রা এবং আলোর সাথে বৃদ্ধি পায় পরে বেশি তাপমাত্রায় হ্রাস পায়। তবে শহরে সবুজের মাত্রা কমানোর জন্য গবেষকরা সুপারিশ করছেন না, কারণ গাছপালা তাপমাত্রা কমায়, আমাদের শরীরের জন্য ভালো, কোনো কোনো গাছপালা উদ্বায়ী জৈব যৌগ সরায়। এক্ষেত্রে খরার নেতিবাচক ভূমিকা, কিছু বহিরাগত গাছের ভূমিকা দেখা দরকার। আর কোন গাছ কম নির্গমন করছে তা জানাও জরুরি বলে তারা জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 1 =