বছরের পর বছর কেটে যাচ্ছে, সঙ্গে এতগুলো লোকের পরিশ্রম, অর্থ; কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। মমির কাছে পৌঁছনোর দরজা কিছুতেই পাওয়া যাচ্ছে না। প্রায় সবারই ধৈর্য হারিয়ে যাচ্ছে, উল্টোদিকে ফান্ড তুলে নেওয়ার কথা বলছেন প্রধান পৃষ্ঠপোষক। কিন্তু হাওয়ার্ড কার্টার নাছোড়বান্দা। এত বছর কাজ করছেন, মিশর নিয়ে এত পড়াশোনা করেছেন। আরও খানিক চেষ্টা করে দেখা যাক না! হাওয়ার্ডের এই মনোভাবই পরবর্তীতে তৈরি করে ইতিহাস। মাটির বুক থেকে বেরিয়ে আসে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক আবিষ্কার; ফ্যারাও তুতেনখামেনের মমি। ১৭ বছর বয়সে মিশরে পা দেওয়া হাওয়ার্ড কার্টারের। ধীরে ধীরে বিভিন্ন ফ্যারাও ও রাজপরিবারের মমি উদ্ধারের অভিযানে সঙ্গী হতে লাগলেন তিনি। নিজের তাগিদেই কাজ শিখতে লাগলেন। তরুণ এই ছেলের কাজে চমৎকৃত হলেন সবাই। কিন্তু তখনও পর্যন্ত ঐতিহাসিক ও রহস্যময় ‘তুতানখামেনের মমি আবিষ্কৃত হয়নি। তার খোঁজে ব্রিটিশ ধনকুবের লর্ড কারনারভন একটি অভিযানের পরিকল্পনা করছিলেন। তুতানখামেনের মমি উদ্ধারের দায়িত্ব পেলেন হাওয়ার্ড কার্টার। ১৯০৭ সালে খোঁজা শুরু হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। তারপর আবার শুরু হয় খননকাজ। কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও সমাধির কাছে পৌঁছনোর মূল ফটকটি পাওয়া যাচ্ছিল না। মনে রাখতে হবে, সেই সময় এত আধুনিক যন্ত্র, প্রযুক্তি কিছুই ছিল না। সেই অবস্থায় থেকে এরকম কাজ করা খুবই কঠিন ও পরিশ্রমের। এদিকে অধৈর্য হয়ে পড়ছিলেন কারনারভন। কিন্তু আশ্বাস দিলেন কার্টার। তাঁর বিশ্বাস, পারবেন তিনি। আর হলও সেটা। সাল ১৯২২। নভেম্বরে কার্টারের এক কর্মী হঠাৎই খুঁজে পান একটি গুপ্ত সিঁড়ি। যা নেমে গেছে মাটির নিচে। অভিজ্ঞ কার্টার বুঝতে পারলেন, এটাই সেই সময়। এটাই রহস্যে পৌঁছনোর রাস্তা। আস্তে আস্তে মোড়ক খোলে বিংশ শতকের উল্লেখযোগ্য আবিষ্কারের। সস্ত্রীক লর্ড কারনারভনও চলে আসেন মিশরে। ২৬ নভেম্বর, ১৯২২। হাওয়ার্ড কার্টারের দল পৌঁছে গেল মমির মূল চেম্বারের সামনে। ভেতরে অপেক্ষা করছে অনন্ত বিস্ময়। সঙ্গে অগুনতি সোনাদানা, হিরে-জহরত।