গেছো ব্যাঙের জীবাশ্ম

গেছো ব্যাঙের জীবাশ্ম

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৪ জুন, ২০২৫

অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের মরুপ্রান্তরে মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেছে এক ব্যাঙের জীবাশ্ম, নাম লিটোরিয়া টাইলারান্টিকোয়া (Litoria tylerantiqua)। বয়স ৫৫ মিলিয়ন বছর। এই একটি খোঁজ পাল্টে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাঙদের গোটা বংশগাথা। আগে বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, দক্ষিণ আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার পেলোড্রিয়াডিড ব্যাঙদের বিবর্তনীয় বিচ্ছেদ ঘটেছিল ৩৩ মিলিয়ন বছর আগে। কিন্তু এই জীবাশ্ম জানাচ্ছে, ব্যাপারটা আরও অনেক পুরানো। অস্ট্রেলিয়ার সরীসৃপ ও উভচর চর্চার কিংবদন্তি মাইকেল টাইলার, যিনি জীবদ্দশায় অস্ট্রেলিয়ান ব্যাঙ গবেষণায় বিপ্লব এনেছিলেন, তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই জীবাশ্মটির নামকরণ করা হয়েছে। এই জীবাশ্মে দেখা গেছে পেলোড্রিয়াডিড পরিবারের গঠন। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে এরা হল আধুনিক অস্ট্রেলিয়ার গেছো ব্যাঙদেরই পূর্বসূরি। তবে শুধুই হাড় নয়, সিটি স্ক্যান-এর সাহায্যে ব্যাঙটির ত্রিমাত্রিক গঠন বিশ্লেষণ করে মিলেছে চমকপ্রদ তথ্য। বিজ্ঞানীরা এই ব্যাঙের শ্রোণীর হাড় বিশ্লেষণ করে তার দেহের গঠন ও চলাচলের ধরণ বুঝতে সক্ষম হয়েছেন। প্রধান গবেষক ড. ফার্মান জানান, “আমরা সিটি স্ক্যান করে বুঝতে পেরেছিলাম, মুরগনের ব্যাঙটি আধুনিক অস্ট্রেলীয় প্রজাতির কাছাকাছি”। এই গবেষণা বিশেষ কিছু দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ক) বিবর্তনের সময়সীমা নির্ধারণ: এই জীবাশ্ম পুরনো ধারণাকে প্রশ্নে ফেলেছে এবং জানিয়েছে গেছো ব্যাঙের বিবর্তন অনেক আগেই শুরু। খ) প্রমাণ দেখাচ্ছে, গন্ডওয়ানা যুগে বনভূমির মাধ্যমে তারা দক্ষিণ আমেরিকা থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ছড়িয়েছিল। গ) ব্যাঙরা বহু বিপর্যয় টপকে টিকে থাকতে পেরেছে। তাদের এই প্রতিরোধক্ষমতা ভবিষ্যতের পরিবেশ সংকটে লড়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠতে পারে। লিটোরিয়া কেবল এক জীবাশ্ম নয়, এটি একটি সময়-সারণি। এতে লুকিয়ে আছে মহাদেশের গঠন, পরিবেশের বিবর্তন, আর এক বর্ণিল প্রাণজগতের আদি ছায়া। এই আবিষ্কার নতুন করে ভাবাতে বাধ্য করছে কীভাবে এই প্রাণীরা মহাদেশ পেরিয়ে, বন পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল পৃথিবীতে। এই আবিষ্কার প্রমাণ করছে ব্যাঙেরা শুধু পরিবেশের মূক সাক্ষী নয়, জীববৈচিত্র্যের নির্ভরযোগ্য ইতিহাসবাহী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 − 8 =