গোল্ডেন লেটুস থেকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ প্রাপ্তি

গোল্ডেন লেটুস থেকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ প্রাপ্তি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩ অক্টোবর, ২০২৪

২০২৩ সালের গবেষণা বলছে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ ভিটামিন ‘এ’-র অভাবে ভুগছেন। ভিটামিন ‘এ’ আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় এক পুষ্টি উপাদান। মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের অভাব ‘লুকোনো ক্ষুধা’ নামে পরিচিত, যা পৃথিবীর বহু দেশের সমস্যা। ভিটামিন’এ’-র অভাব থেকে শিশুদের জেরপথ্যালমিয়া হয় যা থেকে রাতকানা, অন্ধত্ব এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে। এই অপুষ্টি দূর করা বেশ সমস্যাজনক বিষয়। বিজ্ঞানীরা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে ‘গোল্ডেন লেটুস’ তৈরি করেছেন যাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যাবে। গোল্ডেন লেটুস আমাদের যেমন গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি সরবরাহ করতে সক্ষম হবে তেমন এই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে অন্যান্য শাকসবজির পুষ্টিগুণ বাড়ানো যেতে পারে। তামাক ধরনের গাছ নিকোটিয়ানা বেনথামিয়ানা- নিয়ে কাজ করার পর স্পেনের ভ্যালেন্সিয়া পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটির (ইউপিভি) বিজ্ঞানীরা লেটুস (ল্যাক্টুকা স্যাটিভা)-এর জেনেটিক মেক-আপ পরিবর্তন করে, তাতে বিটা-ক্যারোটিনের মাত্রা বাড়িয়েছেন। বিটা-ক্যারোটিন লাল-কমলা রঙের এক যৌগ যা আমাদের শরীরে ভিটামিন ‘এ’-তে পরিণত হয়।
বিটা ক্যারোটিন উদ্ভিদের ক্রোমোপ্লাস্টে দেখা যায়। আবার উদ্ভিদের ক্লোরোপ্লাস্ট সালোকসংশ্লেষণের ফলে গাছের খাদ্য তৈরি করে শক্তি দেয়। বিটা ক্যারোটিনের পরিমাণ খুব বেশি বা কম হলে পাতার কাজে বাধা পড়ে, পাতাগুলো নষ্ট হয়ে যায়। উদ্ভিদের বিটা-ক্যারোটিন যাতে প্রাকৃতিক সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন না ঘটিয়ে গাছকে বেড়ে উঠতে দেয় সেদিকে গবেষকদের দৃষ্টি দিতে হয়েছিল। গবেষকরা জানিয়েছেন, তারা সফলভাবে কোশীয় কম্পার্টমেন্টে বিটা-ক্যারোটিন বেশি পরিমাণে তৈরি করে জমা করেছেন। এর জন্য তারা জৈবপ্রযুক্তি ও উচ্চ আলোর তীব্রতার সাহায্য নিয়েছেন। কিছু অতিরিক্ত বিটা-ক্যারোটিন পাতার কোশের সাইটোপ্লাজমের তরল অংশ- সাইটোসোলে সংরক্ষিত হয়েছিল। ব্যাকটেরিয়া এনজাইম crtB জিনে প্রবেশ করিয়ে গবেষকরা কিছু ক্লোরোপ্লাস্টকে ক্রোমোপ্লাস্টে রূপান্তরিত করেছেন। গবেষকরা লেটুস গাছকে তীব্র আলোতে উন্মুক্ত করে প্লাস্টোগ্লবিউল বা ফ্যাটি স্টোরেজ ইউনিট তৈরি করেছেন। এসবের জন্য কোশে যেমন বিটা ক্যারোটিন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমন তা জৈবভাবে প্রাপ্তিও সম্ভব হচ্ছে। আর এই লেটিস গাছের বর্ণ হলুদ হওয়াতে, একে ‘গোল্ডেন লেটুস’ বলা হচ্ছে। এই লেটুসের বিটা-ক্যারোটিনের সরবরাহের জৈবপ্রাপ্তির উন্নতির ফলে অন্ত্রে এর প্রাপ্তি বাড়ে, সেখানে এটা ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়। এই গবেষণা প্ল্যান্ট জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।