
গ্রিনল্যান্ডের পুর্ব উপকূল সাধারণত খুব একটা আলোচনায় আসে না। কিন্তু হঠাৎ করে নয় দিন ধরে এখানে বিশ্বব্যাপী একটি ধীর, স্থির স্পন্দনের জন্য সমুদ্রের জলরাশি উত্তাল হয়ে ওঠে। তা ভূ- কম্পন শনাক্তকারী যন্ত্রে সক্রিয়ভাবে ধরা পড়ে। এই ভূ-স্পন্দন ৯২ সেকেন্ডে একবার করে বাড়ে ও কমে।প্রাথমিক ভাবে মানুষের অনুভূতির বাইরে হলেও এটি আলাস্কা থেকে অস্ট্রেলিয়া অবধি ভূ-গর্ভ কাঁপিয়ে দেয়। কোনো সাধারণ ভূমিকম্পের তুলনায় এটি অনেকটাই তীব্র।
২০২৩ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর গ্রিনল্যান্ডের ডিকসন খাঁড়ি (ফিয়র্ড), যা একটি হিমবাহ দ্বারা গঠিত সরু উপসাগর, যেটিকে তিন হাজার ফুট খাড়া পর্বত ঘিরে রেখেছে , সেখানে স্যাটেলাইট চিত্রের মাধ্যমে দেখা যায় এক বিশাল ভূমিধ্বস। ২৫ মিলিয়ন কিউবিক গজ বরফ ও পাথর সমুদ্রের জলে এসে পড়ে। এরই ধাক্কায় তৈরি হয় বিধ্বংসী মহা সুনামি যার ঢেউ ছিল প্রায় ৬৫০ ফুট উঁচু। ঢেউটি দুই মাইল দীর্ঘ সংকীর্ণ উপসাগরের ভিতর ছুটে গিয়ে আবার ফিরে আসে। এল্লা দ্বীপের একটি পরিত্যক্ত গবেষণা কেন্দ্রের প্রায় ২ লক্ষ ডলারের যন্ত্রপাতি ধ্বংস করে।
স্যাটেলাইট চিত্র এবং ভূতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে একটি পর্বতের একটি অংশ ধসে গিয়ে সমুদ্রে পড়ে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সৃষ্টি করে। সমুদ্রে এই বরফের চাঁই পড়ার ফলে ওই খাঁড়িতে ৩০ ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়েছিল, যা ভূ-কম্পনের মতোই ভূমিতে চাপ দিচ্ছিল।
এই ঘটনাটির কারণ সন্ধানে ৪১টি প্রতিষ্ঠানের ৭০ জন বিজ্ঞানী একত্রে কাজ করেছেন। তাঁরা স্যাটেলাইট চিত্র, কম্পিউটার মডেলিং এবং ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র তৈরি করেছেন। গবেষকরা মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বরফ গলছে এবং পাহাড়ের স্বাভাবিক সহায়ক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়েছে, ফলে এমন বিপর্যয় ঘটছে। ২০১৭ সালে কারাট খাঁড়িতেও অনুরূপ একটি ভূমিধসে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
এখন নতুন প্রজন্মের স্যাটেলাইট যেমন SWOT(Surface Water and Ocean Topography), আগের চেয়ে অনেক বেশি স্পষ্ট ও বিস্তারিত ছবি দিতে সক্ষম হচ্ছে, যা সমুদ্রের গতিবিধি বুঝতে সাহায্য করছে। গবেষকরা বলছেন, ভবিষ্যতে এধরনের ঘটনার আগাম সতর্কতা ও নিরাপত্তার জন্য প্রযুক্তির নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
গবেষকরা এখন ভূকম্পীয় তথ্যাবলি ঘেঁটে এমন ধীর স্পন্দনের অন্যান্য ঘটনা খুঁজছেন। কার্ল এবেলিং বলেন এটি প্রমাণ করে, পৃথিবীতে এখনো অনেক কিছু রয়েছে যা আমরা জানি না। এই আবিষ্কার ভবিষ্যতে ভূ-কম্প সম্পর্কিত পূর্বাভাস উন্নত করবে। বিশেষ করে সুমেরু অঞ্চলের জাহাজ ও বসতি রক্ষায় তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। গবেষণাটি প্রমাণ করে যে পৃথিবীর সবচেয়ে নীরব প্রান্তগুলোও মনোযোগের দাবি রাখে।