গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কি শীর্ষমুখী ?

গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কি শীর্ষমুখী ?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৪ নভেম্বর, ২০২৫

সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা ব্রাজিলের বেলেম-এ অনুষ্ঠিত সি ও পি ৩০ জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে জানিয়েছেন যে, বৈশ্বিক জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সৃষ্ট নির্গমন এ বছরও সম্ভবত একটি নতুন রেকর্ড ছুঁতে চলেছে। সমগ্র বিশ্বব্যাপী জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো ও শিল্পকারখানা থেকে নির্গত গ্রিনহাউস গ্যাস এখনও প্রতি বছর বেড়েই চলেছে। ২০২৫ সালের শেষে শুধু জীবাশ্ম জ্বালানি ও সিমেন্ট উৎপাদন থেকেই কার্বন ডাই–অক্সাইড নির্গমন ১.১% বৃদ্ধি পেয়ে ৩৮.১ বিলিয়ন টনে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছে গ্লোবাল কার্বন প্রজেক্ট। তবু বিজ্ঞানীরা দেখছেন কিছু আশাব্যঞ্জক ইঙ্গিত— হয়তো খুব শীঘ্রই বিশ্বের নির্গমনের মাত্রা সর্বোচ্চ বিন্দুতে পৌঁছে তারপর কমতে শুরু করবে। অনেক গবেষক বলছেন CO₂ নির্গমন সম্ভবত ইতিমধ্যেই নিম্নমুখী, এবং পুরো গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমনও এই দশকের শেষ থেকে কমতে শুরু করতে পারে।
গবেষকদের মতে, নির্বিচার অরণ্যচ্ছেদন কমলে এবং ভূমি-ব্যবহারের পরিবর্তন নিয়ন্ত্রিত হলে মোট নির্গমন সামান্য হ্রাস পেতে পারে। তবুও তাঁদের মতে—এখনই নিশ্চিত করে বলা যাবে না যে পৃথিবী জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কাটিয়ে উঠছে। জলবায়ু–নীতি বিশ্লেষক বিল হেয়ার মনে করেন, বিশ্বব্যাপী নির্গমন ২০৩০ সালের আগে স্থায়ীভাবে কমতে শুরু করবে না। তবে মন্দের ভালো বিষয় হল বৃদ্ধির হার অবশ্যই ক্রমান্বয়ে স্থিতিশীল হচ্ছে।
প্যারিস চুক্তির এক দশক পরও বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন এখন ১০% বেশি, যা ১.৫ o সে. তাপমাত্রা সীমা ধরে রাখার লক্ষ্য থেকে অনেক দূরে। উন্নত দেশগুলোর নির্গমন দুই দশক ধরে কমছে, কিন্তু দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলো বিশেষত চীন ও ভারত—নিজেদের বাড়তি জ্বালানির চাহিদা মেটাতে নির্গমন বাড়িয়েই চলেছে।
গত দুই দশকে চীন একাই বৈশ্বিক মোট নির্গমনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী। এর প্রধান কারণ এই দেশের বিপুল কয়লা-চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র, যা গত বছর ২.৩ বিলিয়ন টন কয়লা পুড়িয়েছে।
তবে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। চীন আজ বৈশ্বিক নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারে অগ্রগামী—ইলেকট্রিক যানবাহন, সৌরবিদ্যুৎ ও বায়ু-শক্তির দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটছে।
চিন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে ২০৩৫ সালের মধ্যে শীর্ষ নির্গমনের ৭% হ্রাস করবে। হেয়ারের মতে, চীনের নির্গমন যখন শীর্ষে পৌঁছাবে, তখনই বৈশ্বিক নির্গমনও শীর্ষে পৌঁছাবে।
এখন প্রশ্ন হল চীনের নির্গমন কি ইতিমধ্যেই শীর্ষে? বেশ কিছু বিশ্লেষণ বলছে —হ্যাঁ হতে পারে। কার্বন মনিটর–এর সাম্প্রতিক তথ্য ইঙ্গিত করছে যে চীনের CO₂ নির্গমন ২০২৪ সালেই সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে এখন কমছে, এবং ২০২৫ সালে তা ১.২% হ্রাস পেতে পারে। আবার, হেলসিঙ্কি ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার (সিআরইএ)- এর গবেষণাতেও গত ১৮ মাস ধরে কার্বন নির্গমনের স্থির ও নিম্নমুখী প্রবণতার উল্লেখ করা হয়েছে।
নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি একটি কারণ হলেও, চীনের নির্গমন কমার সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ কারণ হল স্থাবর সম্পত্তি বাজারের মন্দা, যার ফলে সিমেন্ট ও ইস্পাতের উৎপাদন কমেছে।
সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ঝু লিউ মনে করেন, বর্তমান অর্থনৈতিক প্রবণতা ও চীনের জলবায়ু লক্ষ্য করে বোঝা যাচ্ছে, CO₂ নির্গমন এখন থেকে ধীরে ধীরে কমতেই থাকবে। তবে প্রশ্ন একটা থেকেই যাচ্ছে, ধরে নেওয়া হচ্ছে বৈশ্বিক CO₂ নির্গমন না হয় কমতে চলেছে কিন্তু মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইডসহ অন্যান্য শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাসও কি একই প্রবণতা অনুসরণ করবে?

সূত্র : Global greenhouse-gas emissions are still rising: when will they peak? By Jeff Tollefson, published in ‘nature’, 12th November,2025.
https://doi.org/10.1038/d41586-025-03618-z.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 + one =