গ্রেট সল্ট লেকের তলদেশে আর একধরনের কীট খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা

গ্রেট সল্ট লেকের তলদেশে আর একধরনের কীট খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৮ মার্চ, ২০২৪

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রেট সল্ট লেকে কয়েক দশক ধরেই মাত্র দুটি প্রাণী দেখা যেত: ব্রাইন শ্রিম্প এবং ব্রাইন ফ্লাই। তাছাড়া, হ্রদের অতি-লবনাক্ত জলে বাস করত শুধুমাত্র ব্যাকটেরিয়া এবং শৈবাল। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা সেখানে আরও একটি প্রাণীর অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন যারা অতিরিক্ত পরিমাণ লবণ সহ্য করতে পারে। এবং এটি দীর্ঘ সময় ধরে ওই হ্রদে লুকিয়ে রয়েছে।
হ্রদের তলদেশে অণুজীব দ্বারা নির্মিত মাইক্রোবিয়ালাইট নামক ক্যালসিয়াম কার্বনেট কাদার স্তর ভেঙে, উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা নিশ্চিত করেছেন যে হ্রদের নীচে আমাদের দৃষ্টির অগোচরে বিভিন্ন প্রজাতির কীট বসবাস করে। জীববিজ্ঞানী জুলি জং এবং মাইকেল ওয়ার্নার এই আবিষ্কারের নেতৃত্ব দেন। ২০২১ সালে তারা সমুদ্রের চেয়ে তিন থেকে ছয় গুণ বেশি লবণাক্ত হ্রদের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে প্রাণীদের এই খোঁজ শুরু করেছিল। তখন তারা প্রথম মাইক্রোবিয়ালাইট দেখতে পান এবং তার নমুনা সংগ্রহ করে আনেন। ভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে তারা ডিএনএ, আরএনএ এবং প্রোটিনের মতো ম্যাক্রোমোলিকিউল আলাদা করেন এবং তাদের সংগৃহীত নমুনা থেকে জ্যান্ত নিমাটোড শনাক্ত করেন।
গবেষকদের ধারণা এই লুকিয়ে থাকা কীট, ব্যাকটেরিয়া ও শৈবাল খেয়ে বেঁচে থাকে, এবং এগুলো তাদের সূর্যের আলো আর হ্রদের জল কমে গেলে শুকিয়ে যাওয়া থেকেও রক্ষা করে। গবেষকরা পরীক্ষাগারে এই নিমাটোড চাষ করতে সক্ষম হয়নি তাই তারা কীভাবে বেঁচে থাকে তা বোঝার জন্য, ক্যানোরহাবডিটিস এলিগানস নামক একটি গোলকৃমি নিয়ে অধ্যয়ন শুরু করে। পরীক্ষাগারে এই প্রাণীটিকে E. coli ব্যাকটেরিয়া এবং গ্রেট সল্ট লেকের মাইক্রোবিয়াল ম্যাটে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া খাওয়ানো হয়েছিল। সি. এলিগান কীটগুলোকে এরপর হ্রদের জলের সংস্পর্শে নিয়ে আসা হয় যা তাদের স্বাভাবিক আবাসস্থলের চেয়ে ৫০ গুণ বেশি লবণাক্ত। যে কীটগুলোকে ই. কোলাই খাওয়ানো হয়েছিল তারা পাঁচ মিনিট মাত্র জীবিত ছিল কিন্তু গ্রেট সল্ট লেকের মাইক্রোবিয়াল ম্যাটে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া ভক্ষণকারী কীট প্রায় ২৪ ঘন্টারও বেশি সময় বেঁচে ছিল। গবেষকদের অনুমান যে এই বিশেষ ধরনের খাবারে এমন কিছু রয়েছে যা গ্রেট সল্ট লেকে বসবাসকারী রাউন্ডওয়ার্মগুলোকে বাঁচিয়ে রাখে। জিনগত তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে যে হ্রদের লোনা এবং হাইপারস্যালাইন অঞ্চল থেকে ৮০টির মতো ভিন্ন নিমাটোড সংগ্রহ করা হয়েছিল। এদের মধ্যে তিনটি সামুদ্রিক এবং উপকূলীয় পলিতে বাস করে, বাকিদের অধিকাংশই অন্য কোনো পরিচিত নিমাটোডের প্রজাতির সাথে মেলেনো যায়নি। গবেষকরা মনে করেন এই কীটগুলো শুধুমাত্র গ্রেট সল্ট লেকে পাওয়া যায়, যা দীর্ঘকাল প্রজনন বিচ্ছিন্নতার পরে তৈরি হয়েছে।
বর্তমানে, গ্রেট সল্ট লেক এক সময় যা ছিল তার একটি অংশ মাত্র। মানুষ নদীর জল ব্যবহার করে ফেলছে, বৃষ্টি কমে যাচ্ছে, হৃদের জল শুকিয়ে যাচ্ছে, মাইক্রোবিয়াল ম্যাটগুলো উন্মুক্ত হয়ে পড়ছে এবং অবশিষ্ট জলের লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন হ্রদটি আর বেশি দিন থাকবে না বড়ো জোর পাঁচ বছর তাই এই হৃদে যে বাস্তুতন্ত্র গড়ে উঠেছে তার ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণভাবে অজানা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two − 2 =