ঘাসফড়িংয়ের খোঁজে

ঘাসফড়িংয়ের খোঁজে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

মিসিসিপি স্টেট ইউনিভার্সিটির একজন বিজ্ঞানী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকোর মরুভূমির কাঁটাঝোপে ১৬ টি নতুন প্রজাতির ফড়িং আবিষ্কার করেছেন। এর মাধ্যমে তুষার যুগে এই ফড়িংরা কীভাবে অভিযোজিত এবং বৈচিত্র্যময় হয়েছিল তা জানা যায়। কীটতত্ত্ববিদ জোভন হিলের এই আবিষ্কারের আগে এই ফড়িংয়ের মাত্র তিনটি প্রজাতি সম্পর্কে তথ্য  ছিল। দক্ষিণ আমেরিকা এবং মেক্সিকোর মরুভূমিতে বসবাসকারী এই নতুন আবিষ্কৃত প্রজাতিগুলি শুষ্ক বাস্তুতন্ত্রের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের চালচিত্র তুলে ধরে। অধ্যাপক হিল যে ফড়িং প্রজাতির উপর গবেষণা করছেন তা হয়তো প্লাইস্টোসিন যুগে বিবর্তিত হয়েছিল, যা তুষার যুগ নামেও পরিচিত। রকি পর্বতমালায়, আল্পাইন তৃণ ভূমিতে হিমবাহ গলে যাওয়ার সময় কিছু প্রজাতি আলাদা হয়ে উঁচু অঞ্চলে চলে যায়। তিনি মনে করেন তাদের আবিষ্কার করা মরুভূমির প্রজাতিগুলিও ওই একইভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভিন্ন প্রজাতিতে পরিণত হয়েছিল।

এই ফড়িংগুলি নিচু, কাঁটাওয়ালা, ঝোপঝাড়যুক্ত অঞ্চলে বাস করে। তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে বিভিন্ন প্রজাতিতে বিবর্তিত হয়। প্রতিটি প্রজাতি একটি নির্দিষ্ট পর্বতশ্রেণীতে বাস করে। এরা সাবধানে সঙ্গী নির্বাচন করে এবং প্রজনন রীতিনীতি জটিল না হওয়ায় এদের জনসংখ্যা সেই পর্বতশ্রেণীতে স্থিতিশীল থাকে।

বিজ্ঞানীদের সংগৃহীত নমুনাগুলি থেকে ডিএনএ বিশ্লেষণের জন্য মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হবে। প্রজাতিগুলি কখন বিচ্ছিন্ন হয়েছিল তা দেখার জন্য বিজ্ঞানীরা একটি আণবিক ঘড়ি ব্যবহার করবেন। এছাড়াও ডিএনএ পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা  দেখবেন এই প্রাণীগুলি কখন পৃথক প্রজাতিতে বিবর্তিত হয়েছিল। এর মাধ্যমে তারা বুঝতে পারবেন অতীতের জলবায়ু পরিবর্তনগুলি প্রাণীদের বসবাসের স্থানকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল। এবং ভবিষ্যতে জলবায়ুর বিভিন্ন পরিবর্তন কীভাবে তাদের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন এর অর্থে পরিচালিত এই প্রকল্পটি আরও দুটি প্রকল্পের সাথে কাজ করছে। এই প্রকল্পগুলির মধ্যে একটি হল “দ্য নর্থ আমেরিকান গ্রাসহপার্স, তৃতীয় খন্ড” নামে একটি বই, যেটি হিল এবং ড্যানিয়েল ওট একসাথে লিখছেন।তিনি বলেন এই ফড়িং গুলি মেলানোপ্লিনি উপ-পরিবারের ফড়িং। বেশিরভাগ ফড়িং ও কীটপতঙ্গের প্রজাতি এই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। এদের সম্পর্কে নতুন বইটি প্রকাশিত হওয়ার আগে তিনি সমস্ত প্রজাতি সনাক্ত এবং বর্ণনা করার জন্য কাজ করছেন। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের লেসি নোলসের সহযোগিতায় দ্বিতীয় প্রকল্পের কাজও চলছে।এই প্রকল্পে  ৬০০ টিরও বেশি প্রজাতির নমুনা সংগ্রহ করে উত্তর আমেরিকা এবং মেক্সিকো জুড়ে মেলানোপ্লিনি বৈচিত্র্যকে প্রভাবিত করার কারণগুলির খোঁজ চলছে।হিল বলেন, এই গবেষণার লক্ষ্য হল বৈচিত্র্যের উৎস কী ও সময়ের সাথে সাথে  বিভিন্ন গোষ্ঠী কীভাবে একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল তা খুঁজে বার করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen + 19 =