ঘূর্ণি আলোর প্রযুক্তি

ঘূর্ণি আলোর প্রযুক্তি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১ ডিসেম্বর, ২০২৫

ইউরোপ উচ্চক্ষমতার অপটিক্যাল ভর্টেক্স বা ঘূর্ণায়মান আলোক রশ্মি নিয়ে এক অনবদ্য গবেষণার উদ্যোগ শুরু করেছে। টাম্পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে পরিচালিত হাইপোভর ( উচ্চক্ষমতার ঘূর্নায়মান আলোকরশ্মি) নামের নতুন ডক্টরাল নেটওয়ার্ক ইউরোপীয় ইউনিয়নের মেরি স্ক্লোডোভস্কা-কুরি অ্যাকশনস (এমএসসিএ) প্রোগ্রাম থেকে পেয়েছে ৪.৪ মিলিয়ন ইউরো অনুদান। এ উদ্যোগের লক্ষ্য হল —উচ্চক্ষমতার অপটিক্যাল ভর্টেক্স প্রযুক্তিকে গবেষণা ও শিল্পক্ষেত্রে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়া, এবং এই ক্ষেত্রের ভবিষ্যৎ বিশেষজ্ঞদের তৈরি করা।

অপটিক্যাল ভর্টেক্স এমন বিশেষ আলোর রশ্মি, যার অরবিটাল অ্যাংগুলার মোমেন্টাম বা কক্ষীয় কৌণিক ভরবেগ আছে। এরা দেখতে ঘূর্ণির মতো। এই ঘূর্ণি-আলো যতটা সুন্দর, তার ক্ষমতা ততটাই অবিশ্বাস্য। এই অনন্য বৈশিষ্ট্য আলোকরশ্মিকে বিশেষ ক্ষমতা দেয়, যার ফলে তা— অত্যন্ত সূক্ষ্ম উপাদান প্রস্তুত ও প্রক্রিয়াকরণ, কণা ত্বরণ প্রযুক্তিতে উন্নত নিয়ন্ত্রণ, দ্রুততর ডেটা ট্রান্সমিশন, এবং পরবর্তী প্রজন্মের ফোটোনিকস অ্যাপ্লিকেশন—সব ক্ষেত্রেই নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে।

তবে সমস্যাও কম নয়। এত শক্তিশালী ভর্টেক্স রশ্মি তৈরি করা যথেষ্ট কঠিন। আর তৈরি হলেও দূরে গেলে বা কোনো বস্তুর মুখোমুখি হলে তার নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য বজায় রাখা আরও কঠিন। এই জটিলতাই এখন পর্যন্ত এর বড় বাধা। ফলে এ প্রযুক্তির বিস্তৃত ব্যবহার এখনও পুরোপুরি সম্ভব হয়নি।

হাইপোভর নেটওয়ার্কের উদ্দেশ্য এই জটিলতার সমাধান করা। এখানে ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প–সহযোগীরা মিলে ১৫ জন ডক্টরাল গবেষককে প্রশিক্ষণ দেবেন। এরা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শিখবেন—

নতুন আলোক উপাদান ও নকশা, আলো কীভাবে বিভিন্ন পদার্থের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া সম্পন্ন করে, কীভাবে আলোকরশ্মিকে আরও শক্তিশালী করা যায়, এবং কীভাবে তাকে শিল্পে ব্যবহারযোগ্য সমাধানে রূপান্তরিত করা যায়।

প্রকল্প সমন্বয়কারী ড. রেজিনা গুমেনিউক জানান, এই নেটওয়ার্ক শুধু গবেষণাই নয়—ইউরোপের ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনকে এগিয়ে নিতে একটি বড় পদক্ষেপ। কম শক্তিখরচ, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও অতি ক্ষুদ্র ন্যানো স্কেলে উৎপাদন প্রক্রিয়াতেও নতুন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।

হাইপোভর প্রকল্পে যুক্ত আছে নির্দিষ্ট নকশায় বিন্যস্ত আলো ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন লেজার রশ্মির ওপর কাজ করা আটটি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী লেজার পরিষেবা ই এল আই- এন পি, এবং আরও নয়টি শিল্প সহযোগী। প্রকল্পটি শুরু হবে ২০২৬ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে।

ইউরোপের এই উদ্যোগ শুধু একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা নয়—এটি ভবিষ্যতের আলোক-প্রযুক্তির এক নতুন অধ্যায় উন্মোচনের প্রতিশ্রুতি। ঘূর্ণায়মান আলোর শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আগামী দিনের শিল্প, যোগাযোগ ও বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি আরও দ্রুত ও নির্ভুল হতে পারে।

সূত্র : Europe launches bold plan to harness twisting beams of light by Tampere University, 24th November,2025.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 − eleven =