
চীনে পঞ্চান্ন হাজার বছর আগের ইউরোপীয় ধরনেরএক প্রস্থ ‘কুইনা’ পাথুরে হাতিয়ার খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। এর ফলে পূর্ব এশিয়ায় মধ্য প্রস্তর যুগের স্থবিরতা নিয়ে নতুন কৌতূহল জেগে উঠেছে, প্রাচীন মানব জাতির উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও অভিবাসন নিয়ে নতুন ধারণা তৈরি হচ্ছে। সাধারণত ইউরোপ ও আফ্রিকায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সময়টিকেই মধ্য প্রস্তর যুগ হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু পূর্ব এশিয়ায়, পরিবর্তনের সেই ধারা এতদিন ‘স্থির’ বলেই মনে করা হতো। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত নতুন গবেষণা এই ধারণাটিতে বদল আনতে পারে। প্রত্নতত্ত্ববিদরা দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ‘লংটান’ নামক একটি জায়গায় সম্পূর্ণ এক প্রস্থ কুইনা প্রস্তুর প্রযুক্তি খুঁজে পেয়েছেন। এই স্থানটি প্রায় ৫০,০০০ থেকে ৬০,০০০ বছর পুরনো। কুইনা প্রযুক্তির ব্যবহার ইউরোপে বহু দশক ধরেই নথিবদ্ধ, কিন্তু পূর্ব এশিয়ায়, এই প্রথম এর প্রমাণ পাওয়া গেল। প্রত্নতত্ত্বের অধ্যাপক বেন মারউইক বলেছেন, “এটি আমাদের চিন্তায় বড়সড় পরিবর্তন আনছে। এখন আমাদের ভাবতে হবে, সেই সময়ে মানুষ আরও কী কী করছিল যা আমরা এখনো জানি না? এটি কিভাবে এই অঞ্চলের মানব বিবর্তনকে প্রভাবিত করেছে?” প্রায় ৩০০,০০০ থেকে ৪০,০০০ বছর আগের সময়কাল মধ্য প্রস্তর যুগ হিসাবে চিহ্নিত। মানব বিবর্তনে, এটি একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ পর্ব। আফ্রিকায় আধুনিক মানুষের উৎপত্তির সাথে এই যুগ ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত। অপরদিকে ইউরেশিয়ায় এটি বিভিন্ন প্রাচীন মানব গোষ্ঠীর বিকাশের সময়কাল। তবে চীনে পুরাপ্রস্তর যুগে পরিবর্তনের গতি ‘ধীর’ ছিল বলেই এতদিন ধারণা ছিল। মারউইক বলেন, “আমরা দেখার চেষ্টা করতে পারি, তারা এর আগে অনুরূপ এমন কিছু করছিল কিনা যা থেকে কুইনা বিবর্তিত হয়েছে। তাহলে বলা যায়, এটি হয়ত স্থানীয় স্তরের বিকাশ – আগের প্রজন্মে বিভিন্ন রূপ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে করতে অবশেষে হয়ত তারা এটিকে পূর্ণতা দিয়েছে”। পূর্ব এশিয়ায় কুইনা প্রযুক্তি খুঁজে পাওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। তিনি বলেন, চীনের প্রত্নতত্ত্ববিদরা এখন অন্য দেশে আবিষ্কৃত জিনিসগুলো চিনতে শিখছেন। গবেষণার গতি বাড়ছে, ফলে নতুন আবিষ্কারের সম্ভাবনাও বাড়ছে। প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারের আকস্মিকতা থাকলেও ভবিষ্যতে মানব অবশেষ খুঁজে পাওয়ার লক্ষ্য রয়েছে। তা থেকে হয়তো জানা যাবে এই হাতিয়ারগুলো আধুনিক মানুষের তৈরি কিনা। পূর্ব এশিয়ায় কখনও নিয়ানডারথাল পাওয়া যায়নি, কিন্তু এবার কি ওখানে নিয়ানডারথালও খুঁজে পাওয়া যাবে? কিংবা হয়তো একটি ডেনিসোভান? মারউইক উপসংহার টানেন, “মানব অবশেষ খুঁজে পেলে হয়তো কিছু নতুন তথ্যও বেরিয়ে আসবে যা আমাদের অবাক করবে”।