চৌকো ধাঁধার মজা

চৌকো ধাঁধার মজা

ডঃ প্রিয়দর্শী মজুমদার, সন্দীপ দে
Posted on ১৭ এপ্রিল, ২০২২

আইনস্টাইনের ধাঁধা, শুনেছেন কি কখনো? খুবই জনপ্রিয়| আন্তর্জালে হাত দিলেই এই ধাঁধার উপর অসংখ্য লিংক আপনি খুঁজে পাবেন| একটু সংক্ষেপে বহু চর্চিত ধাঁধাটা বলেনি তবে| এই সমস্যাটি আইনস্টাইনের পাঁচ বাড়ির সমস্যা নামেও পরিচিত|

পাঁচ রঙের পাঁচটি বাড়ি। প্রত্যেকটি বাড়িতে ভিন্ন ভিন্ন দেশের লোক থাকে। শুধু তাই নয়, এই মানুষগুলি একদমই ভিন্ন স্বভাবের| এরা প্রত্যেকেই আলাদা পানীয় পান করে, সিগারেটের ব্র্যান্ডও আলাদা, এমনকি তাদের পোষা প্রাণীটাও আলাদা| মানে এক কথায় যাকে বলে একদমই ছন্নছাড়া| এদের সম্পর্কে কিছু জটিল তথ্য দেওয়া আছে| তার উপর ভিত্তি করে এরা কে কোন বাড়িতে থাকে, প্রত্যেকের পছন্দের পানীয়, পছন্দের সিগারেটের ব্র্যান্ড, পোষ্য এগুলোকে ঠিক ঠিক ভাবে জেনে ফেলতে হবে| অবশ্যই জটিল সূত্রগুলির মধ্যে সামগ্রিকভাবে সব কিছুই বলা আছে| এবার সূত্রগুলি একটু দেখে নেওয়া যাক|

লাল ঘরে বাস করে ব্রিটিশ।
সুইডিশের পোষা প্রাণীটা হলো কুকুর।
ডেনিশের প্রিয় পানীয় চা।
সাদা বাড়িটার বাঁয়ে সবুজ বাড়ি।
সবুজ বাড়ির মালিক কফি পান করে।
পলমল সিগারেট যে খায় তার পোষা প্রাণী হলো পাখি।
হলুদ বাড়ির মালিক ডানহিল সিগারেট খায়।
মধ্যের বাড়ির বাসিন্দা দুধ পান করে।
প্রথম বাড়িটায় বাস করে নরওয়ের এক লোক।
যে বিড়াল পোষে তার পাশের বাড়ির বাসিন্দা ব্লেন্ড সিগারেট খায়।
ডানহিল যে খায়, তার পাশের বাড়ির লোকটা ঘোড়া পোষে।
ব্লুমাস্টার সিগারেট যে খায় সে বিয়ারও পান করে।
জার্মান লোকটা খায় প্রিন্স সিগারেট।
নীল ঘরটার পাশে থাকে নরওয়ের লোক।
ব্লেন্ড যে খায় তার প্রতিবেশী জল পান করে।

প্রশ্ন হলো, মাছ পোষে কে? এইরে আপনি হয়তো এখনই এই প্রবন্ধটা পড়াই বন্ধ করে দেবেন| হয়তো এইটুকু পড়েই আপনার মাথা ঘুরছে| দয়া করে একটু ধৈর্য ধরুন| আমি মোটেই এই সমস্যাটা সমাধান করতে বসিনি| কারুর কারুর মতে আইনস্টাইন নিজেই বলে গেছেন যে মাত্র ২ শতাংশ মানুষ এই সমস্যাটির সমাধান করতে পারবেন, কারণ এটি অত্যন্ত জটিল| এই সমস্যার ধাপে ধাপে সমাধান সমৃদ্ধ বহু লিংক আপনি একটু খুঁজলেই পেয়ে যাবেন, তাই নতুন কোন সমাধান নিয়ে আমি আপনাদের সামনে আসিনি মোটেই| আপনাকে অনুরোধ করবো আপনি সূত্রগুলো একটু ভালো করে দেখুন আর একটা কাগজ কলম নিয়ে বসুন| দেখুন

পাঁচজন মানুষ ব্রিটেন,নরওয়ে, ডেনমার্ক, সুইডেন ও জার্মানির বাসিন্দা|
তাদের পোষা প্রাণীগুলি হলো ঘোড়া, পাখি, কুকুর, বেড়াল ও মাছ (এটি সম্পর্কে কোন সূত্র নেই কিন্তু প্রশ্ন থেকেই বোঝা যাচ্ছে পঞ্চম পোষ্যটি মাছ)|
তাদের বাড়ির রং লাল, সবুজ, নীল, সাদা ও হলুদ|
পছন্দের পানীয় দুধ, কফি, জল, চা ও বিয়ার|
আর সবশেষে পছন্দের সিগারেট ব্রান্ডের তালিকাটি হলো পলমল, ব্লেন্ড, ডানহিল, প্রিন্স আর ব্লুমাস্টার|

আশা করা যায় এইটুকু তথ্য উদ্ধার করতে আপনাকে খুব বেশি কষ্ট করতে হয়নি| এই তথ্যের দিকে চোখ বোলালেই দেখবেন এটি একটি চৌকো তথ্য অর্থাৎ মানুষও যেমন পাঁচজন, ঠিক তেমনি তাদের পছন্দের জিনিসগুলোও পাঁচটি করেই| আর কোন দুজন মানুষেরই কোনোরকম পছন্দই মেলেনা| কোন দুজনের পছন্দের পানীয় মিলে গেছে বা বাড়ির রং মিলে গেছে এমনটা কিন্তু হচ্ছেনা| এইখানেই হলো এই ধাঁধাটির মজা| আরো একটি লক্ষণীয় ঘটনা হলো পাঁচ X পাঁচ এর এই চৌকো ধাঁধাটি সমাধান করতে আইনস্টাইন পনেরোটি সূত্র দিয়েছিলেন|
এতটা জটিলতায় না গিয়ে যদি আরো অনেক ছোট আকারে এরকম একটি ধাঁধার কথা আমরা ভাবি তাহলে কেমন দাঁড়ায় আসুন দেখা যাক| দুই বালক রাম ও শ্যাম| তারা জামা, প্যান্ট কিনবে| তাদের সামগ্রিক পছন্দের রং লাল, নীল, হলুদ আর সবুজ| ধরুন আমরা তাদের পছন্দ জানি| তাহলে একটা ছক বানিয়ে সেটি লিখে ফেলি|
জামা প্যান্ট
রাম হলুদ নীল
শ্যাম সবুজ লাল

আচ্ছা যদি আপনি তাদের পছন্দগুলি না জানতেন তবে ঠিক কিরকম সূত্র দিলে আপনি সঠিক উত্তরটি পেতেন একটু দেখে নেওয়া যাক| আমি একটা বিকল্প দিলাম, এরকম আরো অনেক বিকল্পই হতে পারে|
রামের লাল রং পছন্দ নয়|
শ্যামের জামার রং সবুজ|
প্যান্ট দুটোর রং লাল আর নীল ছিল|

লক্ষ্য করে দেখুন এই তথ্যগুলির ভিত্তিতে কিন্তু আপনি নিজেই উপরের ছকটা সম্পূর্ণ করতে পারতেন| রামের যেহেতু লাল রং পছন্দ নয় তাই সেই রং নিশ্চয়ই শ্যাম ব্যবহার করছে| যেহেতু শ্যামের জামার রং সবুজ তাই অবশ্যই তার প্যান্ট লাল| আবার রামের প্যান্ট লাল হতে পারেনা তাই রামের প্যান্ট নীল আর শ্যামের প্যান্ট লাল| তাহলে বাদবাকি রং রইলো হলুদ, তাই রামের জামা হবে হলুদ| আপনি অবশ্যই বিকল্প সূত্র ভাবতেই পারেন কিন্তু কিছুতেই তিনের কম সূত্র দিয়ে আপনি সম্পূর্ণ সমাধান পাবেন না| নিজেই এরকম দুই X দুই, তিন X তিন, চার X চার চৌকো ধাঁধা ও তাদের সমাধান সূত্র তৈরী করতে থাকুন এবং নজর রাখুন চৌকো ধাঁধার মাপ বৃদ্ধির সাথে সাথেই আপনাকে কতগুলি করে সমাধান সূত্র বাড়াতে হচ্ছে| এইভাবেই হয়ে উঠুন যুক্তি-বিশারদ ও ধীরে ধীরে এগিয়ে চলুন আইনস্টাইনের ধাঁধার দিকে| তারপর নিজের যুক্তিজাল দিয়ে সেই ধাঁধা সমাধান করে পৌঁছে জান পৃথিবীর দুই শতাংশ যুক্তিবিদের মধ্যে|

লেখকদ্বয় বারাকপুর রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজের ইলেকট্রনিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক