ছত্রাকের আক্রমণ থেকে ব্যাঙ বাঁচাতে ‘ফ্রগ সওনা’

ছত্রাকের আক্রমণ থেকে ব্যাঙ বাঁচাতে ‘ফ্রগ সওনা’

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৪ জানুয়ারী, ২০২৫

বিশ্বজুড়ে কাইট্রিড ছত্রাকের জন্য ব্যাঙ নিশ্চিহ্ন হচ্ছে। অন্তত ৫০০ প্রজাতির ব্যাঙের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে, যার মধ্যে ৯০টা প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এই বিপর্যয়কর জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি অন্যান্য আক্রমণাত্মক প্রজাতি যেমন বিড়াল, ইঁদুর, কেন টোডের ধ্বংসলীলা ছাড়িয়ে গেছে। ব্যাং কী এতটাই গুরুত্বপূর্ণ? হ্যাঁ, পরিবেশে ও মানব স্বাস্থ্যে তাদের অবদান প্রচুর। ব্যাঙ এমন পোকামাকড় খায় যা রোগ বহন করে আর তা মানুষের মধ্যে ছড়ায়। তাদের ত্বক নতুন ওষুধের সমৃদ্ধ উত্স যা আমাদের অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করতে, আফিম আসক্তি রোধ করতে সাহায্য করতে পারে। ব্যাঙ খাদ্যশৃঙ্খলে মানুষসহ অনেক প্রাণীর খাদ্য। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যাঙে পরিণত হওয়ার আগে, ব্যাঙাচি শ্যাওলা খেয়ে জলজ বাস্তুতন্ত্র থেকে শক্তি ডাঙায় বহন করে। এই শক্তি খাদ্য জালে স্থানান্তরিত হতে পারে। তাই একটা ব্যাঙের প্রজাতি হারিয়ে গেলে, খাদ্য প্রবাহের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে।
সম্ভবত কাইট্রিড ছত্রাকের উৎপত্তি এশিয়ায়, সেখানে এই প্যাথোজেন স্থানীয় উভচর প্রাণীর সাথে সহাবস্থান করে। কিন্তু বিশ্বের অন্যত্র কাইট্রিড মারাত্মক হতে পারে, কারণ অন্যান্য স্থানের ব্যাঙের কোনো প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা নেই। কাইট্রিড ব্যাঙের ত্বকের ক্ষতি করে, এতে হৃদপিণ্ডের কাজ বজায় রাখার জন্য যে ইলেক্ট্রোলাইট প্রয়োজন তা হ্রাস পায়। আক্রান্ত ব্যাঙ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মারা যেতে পারে। কাইট্রিড ছত্রাক উভচর প্রাণীর বাণিজ্যের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে, বাস্তুতন্ত্রের স্থায়ী অংশ হয়ে উঠেছে। কাইট্রিড নির্মূল করা সম্ভব নয়, তাই ব্যাঙের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটা উপায় দরকার।
নেচার জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে শীতকালে কাইট্রিড আরও মারাত্মক হয়। এই ছত্রাক গরম সহ্য করতে পারেনা, তাই ব্যাঙদের দিনে কয়েক ঘণ্টা গরম স্থানে রাখলে ছত্রাক সংক্রমণ হ্রাস পেতে পারে। সবুজ সোনালি বেল ব্যাঙের ৬৬টা সংক্রামিত ব্যাঙ নিয়ে পরীক্ষাগারে পরীক্ষা চালানো হয়েছে। যে ব্যাঙের গোষ্ঠী তাদের পছন্দসই তাপমাত্রা বেছে নেওয়ার বিকল্প পেয়েছে, তাদের সংক্রমণ দ্রুত সেরেছে। অন্য গোষ্ঠী নিয়ে একটা নির্দিষ্ট উষ্ণ তাপমাত্রায় রেখে দেখা গেছে, তাদের সংক্রমণ সেরে গেছে, তবে সংক্রমণ সারতে বেশি সময় লেগেছে। নিম্ন-তাপমাত্রায় নিয়ন্ত্রণ গোষ্ঠীতে সংক্রমণ বজায় ছিল। গবেষকরা দেখেছিলেন, তাপ দিয়ে সংক্রমণ নিরাময় করা ব্যাঙগুলো অনাক্রম্য কিনা? তারা দেখেন, ২৩ টা তাপ-নিরাময় করা ব্যাঙের গোষ্ঠীর বাকি ২৩ টা ব্যাঙের তুলনায় দ্বিতীয় সংক্রমণে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ২২ গুণ বেশি। দ্বিতীয় গোষ্ঠীর ব্যাঙের তাপ-চিকিত্সা করা হলেও, এই ব্যাঙগুলো আগে সংক্রামিত হয়নি। অর্থাৎ তাপ দিয়ে সংক্রমণ নিরাময় করা ব্যাঙ ভবিষ্যতে সংক্রমণের প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করে।
এরপর গবেষকরা প্রাকৃতিক ভাবে ২৩৯টা ব্যাঙ নিয়ে কৃত্রিম ঘেরাটোপে রাখেন, যেখানে ব্যাঙগুলো সূর্যের আলোয় নিজেদের গরমে রাখতে পারে, বা ছায়াচ্ছন্ন অঞ্চলেও থাকতে পারে। গবেষকরা দেখেন, ব্যাঙেরা সূর্যের আলোর দিকে চলে যায়, আর নিজেদের সংক্রমণ সারিয়ে নেয়। গবেষকরা এই কৃত্রিম ঘেরাটোপের নাম দিয়েছেন ‘ফ্রগ সওনা’। তাদের মতে বড়ো মাপে এই কৃত্রিম ফ্রগ সওনা অস্ট্রেলিয়ান সবুজ সোনালি বেল ব্যাঙ রক্ষা করতে পারবে। আর এটা অন্য স্থানের ব্যাঙের জন্য উপকারী হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

10 + six =